ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন মেয়েকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় মা

ডেঙ্গু আক্রান্ত মাহিরাকে কোলে নিয়ে সামলানোর চেষ্টা করছেন মা মোমেনা আক্তার
ছবি: সৌরভ দাশ

থেমে থেমে কেঁদে উঠছে ১১ মাস বয়সী শিশু জান্নাতুল মাহিরা। তাকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন মা মোমেনা আক্তার। তাঁর চোখেমুখে উৎকণ্ঠা আর ক্লান্তির ছাপ। মাহিরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। গতকাল শুক্রবার থেকে চট্টগ্রাম নগরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি সে।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে সন্তানের শয্যায় বসে মোমেনা আক্তার বলেন, ‘মাহিরা চোখের সামনে থাকলেও বড় দুই মেয়ে নেই। তারাও ডেঙ্গু আক্রান্ত। বড় ভাইয়ের বাসায় চিকিৎসা চলছে। সারা দিন তাদের কেমন কাটছে, তা ভেবেই ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছি।’  

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে থাকেন মোমেনা আক্তার। তাঁর স্বামী আবু জাফর দুবাইপ্রবাসী। মোমেনার দুই ভাই, মা ও বাবা চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেটের বিশ্বকলোনি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। এখানে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তাঁর তিন মেয়ে।

গত বুধবার হঠাৎই মাহিরার জ্বর আসে। সেদিনই পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শুরুতে বাসায় চিকিৎসা চলছিল। পরে জ্বর না কমায় মাহিরাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন মোমেনা। তিনি জানান চিকিৎসকেরা বলেছেন, মাহিরার রক্তে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে গেছে। তবে ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

মোমেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মাহিরার জ্বর আসার পর দিন গত বৃহস্পতিবার তাঁর ১০ বছর বয়সী যমজ দুই মেয়ে জেসমিন আক্তার ও জান্নাতুল মাওয়ারও জ্বর আসে। তাদেরও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা তাদের ঘরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে আজ সকাল থেকে জান্নাতুলের কাশি হচ্ছে। এখন ওই দুই মেয়েকে নিয়েও তাঁর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

একদিকে হাসপাতালে ১১ মাসের মেয়েকে সামলাতে হচ্ছে, আবার বাসায় বারবার ফোন করে বড় দুই মেয়েরও খোঁজ নিতে হচ্ছে মোমেনা আক্তারকে। বড় দুই মেয়েও ডেঙ্গু আক্রান্ত

হাসপাতালে মোমেনাকে সঙ্গ দিচ্ছেন বড় ভাই আবু মহসীন। তিনি কখনো ওষুধের জন্য ছুটছেন, কখনো যাচ্ছেন খাবার আনতে। আবার অন্য দুই ভাগনির খোঁজখবরও তাঁকে রাখতে হচ্ছে।

আবু মহসীন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি মাহিরা খাবার খেতে চাইছে না। গত দুই দিন জ্বরে কাতরিয়েছে। রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। রাতে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

ভর্তি আছে আরও ৩৭ শিশু

হাসপাতালটিতে শুধু ১১ মাস বয়সী মাহিরা নয়, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৩৬ শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী আছে ৭০ জন। গত বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে ২ বছর ৬ মাস বয়সী মরিয়ম জান্নাত নামের এক শিশু ডেঙ্গুতে মারা গেছে।

হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকেরা তাঁদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে একটি শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রামে শেষ আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে ২৮১টি শিশু। বিভাগে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৭টি শিশুসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, শিশুদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, শিশুরা বাইরে যায়, স্কুলে যায়।