সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ রোববার প্রকাশিত এক নিউজ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে। তবে কতজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি পাঠানো হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সূত্রগুলো।
গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও ওই কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতি–সংক্রান্ত তথ্য যাচাই–বাছাইয়ের কাজ চলমান। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ৪ ডিসেম্বর জানায়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ কয়েকজন বিচারপতির আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। এরপর আজ নিউজ আপডেটে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাবলি রাষ্ট্রপতির কাছে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হলো।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ১০ বছর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ২০১৭ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত ২০ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। এ রায়ের ফলে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বহাল হয়।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে। ষোড়শ সংশোধনীর আগের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কাউন্সিল যাচাই–বাছাই করে অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। অভিযোগ তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠাতে পারেন। কাউন্সিল তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে যদি এমন রিপোর্ট দেন যে সংশ্লিষ্ট বিচারক তাঁর পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হয়েছেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে ওই বিচারককে তাঁর পদ হতে অপসারিত করবেন।
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করেছিল বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ এবং ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সেদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা জানান, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। তবে হাইকোর্ট বিভাগের কোন ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না, তাঁদের নাম তখন প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের কার্যতালিকায়, ১২ জন বিচারপতির নাম দেখা যায়নি। তাঁদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন।