মাছের খামারের বড় জলাশয়ের তীরজুড়ে কেবল মরা মাছ। নৌকা নিয়ে সেসব মাছ দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছেন কয়েকজন শ্রমিক। কয়েক দিন ধরে এভাবে মাছ মরতে থাকায় ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন খামারের মালিক-কর্মচারীরা।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্প এলাকার ৮৮ একর জলাশয়ে গড়ে ওঠা মো. রবিউল হোসেনের খামারে আজ শনিবার সকালে এমন চিত্র দেখা গেল। মাছ মরতে থাকায় রবিউলের মাথায় হাত পড়েছে। গরম না কমলে এই সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনাও কম। কেবল রবিউল নন, মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকার মাছের খামারে মাছ মরতে শুরু করেছে। মৎস্যবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের মতে, প্রচণ্ড গরমে পানিতে পিএইচের মাত্রা বেড়ে যাওয়া অক্সিজেন–স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।
খামারি রবিউল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরমে নিয়মিত তাঁর খামারে মাছ মরছে। ১০ বছর ধরে তিনি মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। এর আগে কখনো এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েননি। চিকিৎসকের পরামর্শে মাছ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একই এলাকার চাষি মো. আবু তাহের বলেন, ১৮ একর জলাশয়ে তিনি মাছ চাষ করেছেন। তাঁর একটি খামারের কিছু মাছ মারা গেছে। সব খামারই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এ পরিস্থিতিতে মাছের খাবার দেওয়া বন্ধ রেখেছেন। বৃষ্টি না হলে খামারিদের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।
মিরসরাই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৭ হাজার ৮০৬ একর জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৪৬ একর জলাশয় কেবল ইছাখালী, ওচমানপুর, ধুম ইউনিয়ন ও মুহুরী প্রকল্প এলাকার। উপজেলায় এ বছর মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার টন।
স্থানীয় মাছচাষিরা জানান, মিরসরাই উপজেলার গত ৩০ বছরে জমিতে বাঁধ দিয়ে কয়েক শ মাছের খামার করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ জলাশয়ের গভীরতা কম। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে জলাশয়ে পানি আরও কমে যায়। এরপরও অন্য বছরগুলোতে তাপমাত্রা কম থাকায় মাছের খামারে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে এ বছর বৈশাখ মাসে বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণে খামারের মাছ মরতে শুরু করেছে। খামারের মাছ রক্ষায় এখন অধিকাংশ খামারিরই দিশাহারা অবস্থা।
মিরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলার মাছের খামারগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসা ও পরামর্শ দেন মৎস্য চিকিৎসক মো. নেয়ামূল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গরমের তীব্রতা বাড়ায় খামারের পানির পিএইচ বেড়ে গিয়ে রাতের বেলায় অক্সিজেন সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে ভোররাতে অনেক খামারে মাছ মারা যাচ্ছে। মিরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলার চরাঞ্চলের মাছের খামারগুলোর গভীরতা কম থাকায় বেশি সংকট তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে চাষিরা বাইরে থেকে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা ও পরিমিত মাত্রায় চুন প্রয়োগ করে এবং জরুরি অবস্থায় অক্সিজেন ট্যাবলেট বা পাউডার ছিটিয়ে উপকার পেতে পারেন। চাষিরা মৎস্য কার্যালয়কে জানালে এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেবা দেওয়া হবে।