সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের পুরোনো রেলস্টেশনে
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের পুরোনো রেলস্টেশনে

গাফিলতি দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা, দায়িত্ব নিয়েই চসিক কর্মীদের হুঁশিয়ারি শাহাদাতের

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেন। দায়িত্ব পালনকালে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী গাফিলতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান মেয়র। আর দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন শাহাদাত হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি এলাকায় মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গণগ্রন্থাগারের সম্মেলনকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভা শেষে সন্ধ্যায় নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে যান তিনি।

৪৪০ কোটি টাকার ঘাটতি ও দেনা নিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অতীতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, তাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালনায় সব চ্যালেঞ্জ নিজের কাঁধে নিলাম। একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপহার দেব। এ জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাজ করতে হবে।’

দায়িত্ব পালনের শুরুতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে চলবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। মশা মারার জন্য কেনা ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করবেন। যদি মশা না মরে সে ওষুধ নেবেন না।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অধীন দুই হাজার শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিক আদৌ রয়েছে কি না, তা যাচাই করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাবেন। যদি ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁদের পাওয়া না যায়, তাহলে চাকরি না–ও থাকতে পারে। প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবেন।

নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, অফিস চলাকালে কেউ যেন সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে না যান। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেউ যেন রাজনৈতিক আলাপ না করেন। রাজনীতি করবেন বিকেল ৫টার পর। আর দায়িত্ব পালনের সময় সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে বেশিক্ষণ অবস্থান করবেন না। কেউ যদি ভয়ভীতি ও ধমক দেওয়ার চিন্তা করেন, তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করবেন। প্রধান কার্যালয়ে কাজ শেষ করে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কার্যালয়, উন্নয়নকাজসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে যাবেন।

সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানান, মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় বেদখল হয়ে গেছে। রাজনীতি করতে এসে অনেকে বড় বড় কথা বলেন। ক্ষমতা থাকলে নিজের নামে করে নেন। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ধার করতে হবে। এই কাজ তিনি করবেন।

সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালকে আবার ১ নম্বর অবস্থান দেখতে চান বলে কর্মকর্তাদের বলেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া রাজস্ব খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে তাঁর নিজের বাড়ি, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর নিয়ে কী কী ঘটনা হয় তা জানা আছে। তাই সাবধানে থাকবেন। কর আদায়কারীরা গৃহকর কমিয়ে দেওয়ার নামে টাকা আদায় করার মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত ধানের শীষ প্রতীকে পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগের নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন; কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক শাহাদাত।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই মামলার রায়ে গত ১ অক্টোবর শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে গত রোববার সকালে সচিবালয়ে শপথ নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। একই সঙ্গে কাউন্সিলর না থাকায় করপোরেশন পরিচালনার জন্য ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন।