গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতি ইউনিট গ্যাসের জন্য আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ নির্বাহী আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে গ্যাস বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়ানোর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। ফলে গ্যাসে কোনো বাড়তি দাম দিতে হবে না গ্রাহকদের। এর আগে গত জানুয়ারিতে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ায় সরকার। তবে ওই সময় কোনো প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানোর বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি।
ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করা প্রতি ইউনিট গ্যাস থেকে আয় উৎপাদন চার্জ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চার্জ, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গবেষণা তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন চার্জ, বিতরণ চার্জ ও মূল্য সংযোজন কর খাতে ভাগ করে দাম নির্ধারণ করত জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। তবে জ্বালানি বিভাগের নির্বাহী আদেশে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিইআরসি গবেষণা তহবিল ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে আয় বাড়ানো হয়নি। যদিও এসব তহবিল গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে কাজে লাগানো হয়।
দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদনের দায়িত্বে আছে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফসিএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
প্রতি ইউনিট গ্যাস উৎপাদনের জন্য বাপেক্সে ৩ দশমিক শূন্য ৪১৪ টাকা, বিজিএফসিএল শূন্য দশমিক ৭০৯৭ টাকা ও এসজিএফসিএল শূন্য দশমিক ২০২৮ টাকা পায়। জুলাই থেকে এটি বাড়িয়ে বাপেক্সের ক্ষেত্রে চার টাকা ও বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি এক টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্যাস সঞ্চালনের একমাত্র সংস্থা হলো গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। প্রতি ইউনিট গ্যাস সঞ্চালন করে তারা আয় করত ৪৭ পয়সা। জুলাই থেকে তারা পাবে ১ টাকা ২ পয়সা। আর বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) প্রতি ইউনিট থেকে আয় করবে শূন্য দশমিক শূন্য ৬৮৩ টাকা। এলএনজি আমদানির দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) প্রতি ইউনিটে পাবে শূন্য দশমিক ১০৪৩ টাকা।
ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ করে ছয়টি বিতরণ সংস্থা। এর মধ্যে ঢাকা ও আশপাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেটে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি, কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি, খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ও উত্তরাঞ্চলে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি গ্যাস সরবরাহ করে।
সুন্দরবনের ইউনিটপ্রতি বিতরণ চার্জ ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪ পয়সা করেছে জ্বালানি বিভাগ। কর্ণফুলীর চার্জ ২৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ পয়সা করা হয়েছে। এ ছাড়া জালালাবাদের ১১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ পয়সা, তিতাসের ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২১ পয়সা, বাখরাবাদের ১৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ পয়সা ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৬ পয়সা করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি সব কোম্পানি মুনাফা করছে। তাদের রাজস্ব চাহিদা বুঝেই বিইআরসি তাদের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। নির্বাহী আদেশে এখন তাদের এসব চার্জ বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হলো।