টানা তিন দিন রোদ থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে আসা পাহাড়ি নদী ভোগাই ও চেল্লাখালীতেও পানি অনেকটাই কমে গেছে। তবে গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলো। পানি ধীরগতিতে কমছে। আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তিন ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এদিকে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামে আবদুর রশিদ (৪৫) নামের এক কৃষিশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি একই এলাকার মৃত জোনাব আলীর ছেলে। গতকাল বিকেলে বাড়ির পাশে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পানিতে পড়ে তলিয়ে যান। পরে পথচারীরা দেখতে পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ নিয়ে উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গত শনিবার রাত থেকে উপজেলায় উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের ৭১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। গত তিন দিন আকাশে রোদ থাকায় গতকাল পর্যন্ত নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত গ্রামগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। ধীরগতিতে কমার কারণে যোগানিয়ার আটটি গ্রামে সাড়ে তিন হাজার, কলসপাড় ইউনিয়নের আটটি গ্রামে এক হাজার ও মরিচপুরান ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এসব এলাকার বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও আশপাশে জমে থাকা পানিতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া চলাচল করতে পারছেন না অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।
কাপাসিয়া গ্রামের কৃষিশ্রমিক আল-আমিন বলেন, ‘বাড়িঘরে বন্যার পানি এহনোও নামে নাই। পানি কমতাছে খুব আস্তে আস্তে। সাত দিন ধইরা আশ্রয়কেন্দ্রে বউ-পোলাপান লইয়া কষ্টে আছি। তার পরে গত রাইতেও মেঘ (বৃষ্টি) অইছে। তিন দিনে পানি কিছুডা কমছে, আবার যদি মেঘ অয়, তাইলে আর উপায় নাই। মেঘ লইয়া আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। সেই সঙ্গে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও কমছে। যাঁরা আছেন, তাঁদের নৌকায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২৯ হাজার ৫৬০টি পরিবারকে শুকনা খাবার, স্যালাইন, মোমবাতি ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।