সরকার পতনের সুযোগে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভূমিহীনদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির নেতা আলমগীর হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহর মাইজদীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন ব্যক্তিরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা এ সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তির বসতঘরও ভাঙচুর করেন। এ পরিস্থিতিতে হামলার শিকার পরিবারগুলো বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত জহিরুল ইসলাম। বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, তিনিসহ একই এলাকার আবদুল মান্নান, দেলোয়ার হোসেন, মহিন উদ্দিন, শামীম হোসেন, ইমাম হোসেন, মো. সফিক ও মো. মনির উদ্দিন সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর হোসেন একই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাঁরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আলমগীরের নেতৃত্বে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নানা রকম হুমকি দিয়ে যান।
জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আগের দিনের হুমকির জের ধরে আলমগীরের লোকজন পরদিন ৬ আগস্ট চর জুবিলি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাগ্গা এলাকার তাঁদের বাড়িঘরে অতর্কিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এ সময় তাঁরা তিনটি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। জহিরুলের অভিযোগ, হামলা-ভাঙচুর থেকে রেহাই পায়নি ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একই এলাকার দেলোয়ারের বসতঘরও। ঘটনার পর তাঁরা সুবর্ণচরের চর জব্বর থানায় একাধিকবার যোগাযোগ করলেও পুলিশ থানা থেকে বাইরে না যাওয়ায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছাত্রদের আন্দোলন দেখে তিনি নিজেও জেলা শহরে তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আন্দোলন শেষে সফলতা পেয়ে তাঁরা যেখানে আনন্দ করবেন, সেখানে বাড়িতে গিয়ে দেখতে হয়েছে বিএনপির লোকজনের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের দৃশ্য। উল্লেখিত বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা চর জুবিলিসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিনে নানা তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এ কারণে তিনিসহ এলাকার মানুষজন এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগকারীরা যে জমির ওপর বসবাস করছেন, সেসব জমি আমাদের। তাঁরা ওই জমি দখল করে জোর করে বাড়িঘর করেছেন। তবে তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিইনি আমরা। তাঁরা (ভুক্তভোগী) বাড়িঘরে আগুন দিয়ে এখন আমার নাম প্রচার করছেন।’
ভূমিহীনদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুবর্ণচরের চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাউছার আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, থানায় এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।