উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েই শিক্ষার্থীরা যে দুটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন, তা হলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন এবং কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন।
এই সিদ্ধান্ত শুধু তাঁদের চার বছরের একাডেমিক জীবনই নয়, বরং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার মান, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ও বোঝা জরুরি। এসব বিষয় নিয়েই ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর উদ্যোগে এবং প্রথম আলো ডটকমের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ টক শো: কী পড়ব, কোথায় পড়ব। অনুষ্ঠানটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
ফেরদৌস বাপ্পীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো, ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আরিফা গনি রহমান এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস বিভাগের শিক্ষার্থী রাইয়ান মোর্শেদ তালুকদার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অধ্যাপক ড. জুড উইলিয়াম হেনিলোর কাছে উপস্থাপক জানতে চান, ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বলে থাকেন, এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীবান্ধব। এই পরিবেশ তৈরিতে আপনাদের কৌশল কী?
উত্তরে ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘ইউল্যাব একটি উন্মুক্ত দ্বার নীতি অনুসরণ করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ই-মেইলের মাধ্যমে শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমাদের দরজা সব সময় তাঁদের জন্য খোলা। পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারে। তাঁদের প্রয়োজন ও সমস্যার কথা জানাতে পারে। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়।’
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মতামত যেন সমান গুরুত্ব পায়, তা আপনারা কীভাবে নিশ্চিত করেন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মতামত নিশ্চিত করা হয় আমাদের ‘‘কুইক রেসপন্স সিস্টেম’’-এর সাহায্যে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-মেইলের উত্তর দিই এবং পরামর্শ-সভায় উত্থাপিত বিষয়গুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া প্রদান করি।’
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং কার্যকর যোগাযোগ বজায় রাখার প্রসঙ্গে ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘প্রতি টার্মে আমরা শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করি, তাঁরা তাঁদের শিক্ষকদের নিয়ে সন্তুষ্ট কি না? স্নাতকের পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে মতামত জানতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে ইউল্যাবে আমরা একটি বিশেষ দর্শন অনুসরণ করি। এই দর্শন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা সবার আগে বিবেচনা করা হয়। আগের শিক্ষাকার্যক্রম শিক্ষককেন্দ্রিক হলেও এখন ইউল্যাব শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়।’
ইউল্যাব কী কারণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা—এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস ও কার্যকর উদ্যোগই ইউল্যাবকে অনন্য করে তুলেছে। এটি আমাদের অন্যতম দিকনির্দেশক নীতি। আমরা ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করি।’
এরপর উপস্থাপক আরিফা গনি রহমানকে বলেন, ‘অনেকের ধারণা, লিবারেল আর্টস মানে শুধুই মানবিক, সাহিত্য কিংবা দর্শন। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বা ইউল্যাবে কি শুধু এই বিষয়গুলোই পড়ানো হয়?’
উত্তরে আরিফা গনি রহমান বলেন, ‘ব্যাপারটি আসলে এমন নয়। লিবারেল আর্টস হলো একটি সিস্টেম। এটি মানবিক বা হিউম্যানিটিজ বিভাগের কিছু নয়; বরং স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ গড়ার একটি সিস্টেম। ইউল্যাবে একজন শিক্ষার্থী যখন একটি নির্দিষ্ট বিভাগে পড়তে থাকেন, পাশাপাশি অন্য বিভাগের বিষয়গুলো নিয়েও তিনি পড়াশোনা করতে পারেন। এতে তাঁর শিক্ষা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না।’
আরিফা গনি রহমানের কথার সূত্র ধরে উপস্থাপক ফেরদৌস বাপ্পী বলেন, ‘তার মানে ইউল্যাবে শিক্ষার্থীরা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। তাঁরা বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নিয়ে ভর্তি হয়েও যদি তাঁদের মানবিক কিংবা অন্য যেকোনো বিভাগের কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে, সেটি তিনি তাঁর মেজর বিষয়গুলোর সঙ্গে মাইনর হিসেবে রাখতে পারেন।’
‘হ্যাঁ, দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সিস্টেমটি প্রায়ই দেখা যায়। মূলত এটিই ইউল্যাবকে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করে তুলেছে।’ বলেন আরিফা গনি রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী রাইয়ান মোর্শেদ তালুকদারের কাছে উপস্থাপক জানতে চান, তিনি যে প্রত্যাশা নিয়ে ইউল্যাবে ভর্তি হয়েছিলেন, তা কতটা পূরণ হয়েছে?
উত্তরে রাইয়ান মোর্শেদ বলেন, ‘আমি যেসব প্রত্যাশা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম তা মোটামুটি ভালোভাবেই পূরণ হয়েছে। আমার আসলে এখানে যে জিনিসটি ভালো লাগে, তা হলো, ফ্যাকাল্টিদের সঙ্গে ওপেন চ্যানেলে কথা বলা যায়। মতামত দেওয়া যায়।’
রাইয়ান মোর্শেদ জানান, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স এবং ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তিগুলো তাঁদের শিক্ষা কারিকুলামে প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইউল্যাবে প্রায়ই বিভিন্ন ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়, যা তাঁদের ক্যারিয়ার গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।