বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বস্ত্র–সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণসহ মোট ২৫টি প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে ১৭টি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এগুলোর মেয়াদ এক বা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গে বেশির ভাগ প্রকল্পে বেড়েছে সম্ভাব্য ব্যয়ও।
শুরুতে এই ১৭ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এখন ব্যয় ১১১ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকায়।
১৭টি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এগুলোর মেয়াদ এক বা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গে বেশির ভাগ প্রকল্পে বেড়েছে সম্ভাব্য ব্যয়ও।
বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি। তারা বলেছে, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রকল্পের গুণগত মান ও প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
গত মার্চে অনুমিত হিসাব কমিটিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৫টি বস্ত্র–সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ–সম্পর্কিত।
অনুমিত হিসাব কমিটি সূত্র জানায়, কমিটি সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্পগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করার সুপারিশ করে। এর মধ্যে চলতি বছর ও আগামী বছরে কয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে, বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই, এমন কোনো প্রকল্প আছে কি না এবং যেসব প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে কতটা লাভ হবে, এসব বিষয় নির্ধারণ করতে বলেছে কমিটি।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপনে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। এর মধ্যে প্রকল্পটি দুবার সংশোধন করা হয় এবং আরও দুবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে সম্ভাব্য ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে। এখন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন। তবে গত জানুয়ারি এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। এখন এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
সিলেটে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পেরও একই দশা। ২০১৭ সালে নেওয়া এই প্রকল্প ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি একবার সংশোধন এবং তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে। সর্বশেষ এই প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যথাযথ ব্যক্তিকে নিয়োগ না দেওয়া, প্রকল্প অনুমোদন, অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়াসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। প্রকল্প নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।নজরুল ইসলাম খান, সাবেক শিক্ষাসচিব
সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, মাদারীপুরে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিদ্যমান সাতটি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও ছয়টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে আজিজুননেসা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন, মেহেরপুরে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন, মাদারীপুরে মরহুম আবদুর রব তালুকদার টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নাজিরপুরে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন, বরিশালের গৌরনদীতে সুকান্ত বাবু টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পেও সময় ও ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া সময় ও ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় পাঁচটি বেসিক সেন্টারের পাঁচটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং দুটি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পেরও।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারি, কার্যাদেশ হওয়ার পর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, তাঁরা সেভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মার্চে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনুমিত হিসাব কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রকল্পের গুণগত মান ও প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বারবার না বাড়িয়ে জমি অধিগ্রহণের জটিলতাসহ প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্পের সঠিক মেয়াদকাল নির্ধারণের পরামর্শ দেয় কমিটি।
সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যথাযথ ব্যক্তিকে নিয়োগ না দেওয়া, প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়াসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। প্রকল্প নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আর বস্ত্র ও পাটের ক্ষেত্রে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘উদ্ভাবনী’ প্রকল্প নেওয়া দরকার।
করোনা মহামারি, কার্যাদেশ হওয়ার পর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, তাঁরা সেভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ