মাহবুবা ও নাসিমার দেহে এখনো দেড় হাজারের বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। সেই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
শরীরে এখনো ১ হাজার ৭৯৭টি স্প্লিন্টার। এগুলোর জ্বালাপোড়ায় সারা রাত ঘুমাতে পারেন না মাহবুবা পারভীন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে যেন আবার মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কবে দেহে শান্তি পাবেন, সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন।
কেমন আছেন জানতে চাইলে মাহবুবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীরের স্প্লিন্টারগুলো সব সময় খোঁচায়, সুইয়ের মতো হুল ফোটায়। বাতাস না পেলে আরও যন্ত্রণা হয়। ১৮ বছর ধরে এই ভার বহন করে চলছি, আর পারি না।’
মাহবুবা বলেন, ‘পাঁচ বছর হুইলচেয়ারে আর আট বছর ক্রাচে ভর করে হাঁটার পর এখন অন্যের সাহায্য নিয়ে হাঁটতে পারি।’
মাহবুবা থাকেন সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনিতে। গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনব বলে খোলা ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চের পাশে বসেছিলাম। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ। আর কিছুই মনে নেই। পরে জেনেছি, উদ্ধারকারীরা জানতেন না আমি জীবিত না মৃত। পরে পত্রিকায় ছবিতে দেখেছি, বুকের ওপর ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে আমি পড়ে আছি।’
মাহবুবা এখন ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। শারীরিক অশান্তির মধ্যে রাজনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে মানসিক অশান্তির মধ্যে আছেন মাহবুবা। বলেন, রাজনীতির জন্য আজ তাঁর এ অবস্থা। অথচ সাভার পৌর আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয় না। নিজে কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও তাঁকে মঞ্চে ডাকা হয় না।
এখনো অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটান নাসিমা ফেরদৌস। তাঁর হাতে-পায়ে ও ফুসফুসের কাছে এক থেকে দেড় হাজার স্প্লিন্টার। তিনি বলেন, ‘স্প্লিন্টারের জ্বালাপোড়ায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে মনে ভাবি, তবু তো বেঁচে আছি। সেদিন লাশের গাড়িতে হাত-পা না নাড়ালে হয়তো হাসপাতালে নেওয়া হতো না।’
নাসিমা তখন ঢাকা মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি ছিলেন। এখন তিনি সহসভাপতি। দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্য ছিলেন।
নাসিমা বলেন, ‘সেদিন আমি নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছিলাম। নেত্রী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন গ্রেনেড ছোড়া হয়। সেই গ্রেনেড আমার ওপরে এসে পড়ে। আইভি আপা “মা” বলে চিৎকার করে পড়ে গেলেন। আমিও পড়ে গেলাম। দ্বিতীয় গ্রেনেডে আমার দুটি পা টুকরা টুকরা হয়ে গেল। আর কিছু মনে নেই। শুনেছি, আমাকে তোলা হয়েছিল লাশের ট্রাকে। মর্গের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। সেখানে জ্ঞান ফিরলে আমি চিৎকার করে উঠি।’
নাসিমার ছেলে মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘এক সাংবাদিকের ফোন পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মা মৃতের মতো বারান্দায় পড়ে আছেন। সেখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে রক্ত দিই। পরে বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে যাই। কয়েক দিন পর নেত্রী জেনে মায়ের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।’