চাহিদামতো সারের দাবিতে কয়েক দিন আগে জামালপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ে এমওপি সারের অভাবে কৃষকেরা সবজির চাষাবাদ করতে পারছেন না। নওগাঁয় ইউরিয়া সার দিতে না পারায় খেতের ধানগাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। অথচ এরই মধ্যে একশ্রেণির অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ী সার মজুত করছেন। গাইবান্ধা ও নওগাঁয় গত রোববার রাতে অবৈধভাবে মজুত প্রায় ১ হাজার ৬০ বস্তা ডিএপি ও এমওপি সার উদ্ধার করা হয়েছে।
সবজি চাষ করা যাচ্ছে না
ফুলকপির চারা তৈরি করে রেখেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা গ্রামের কৃষক দীপেন রায়। এখন চারা জমিতে রোপণ করবেন। কিন্তু এমওপি সারের অভাবে পারছেন না।
দীপেন বলেন, চারা লাগানোর আগে জমিতে এমওপি সার দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও সার পাচ্ছেন না। দু-চার দিনের মধ্যে সার না দিতে পারলে চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
বালিয়াডাঙ্গীর লাহিড়ী এলাকার কৃষক খশিয়র রহমান অভিযোগ করেন, ডিলারদের কাছে সার নেই। অথচ খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে ঠিকই সার আছে। কৃষক পর্যায়ে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা এমওপি সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় বিসিআইসির পরিবেশক আছেন ৬৩ জন। আগস্টে তাঁদের মধ্যে ১ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হলেও ২২ পরিবেশক ৩৫৮ মেট্রিক টন সার নেন। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসে পরিবেশকদের ৮৫৭ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৫৭ পরিবেশক টাকা জমা দিয়েছেন।
বিসিআইসির পরিবেশকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ পরিবেশকই সারের টাকা জমা দিয়েছেন। তবে সার আনতে সিরিয়াল পেতে দেরি হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব ডিলার এমওপি নিয়ে আসবেন।
ধানগাছ লাল হয়ে যাচ্ছে
নওগাঁয় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। শনিবার সকাল ১০টায় বদলগাছি উপজেলা সদর ইউনিয়নের মেসার্স আলম ট্রেডার্সের সামনে গিয়ে কৃষকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
সারের জন্য সকাল ছয়টায় লাইনে দাঁড়ান ইউনিয়নের ছোট গাবনা গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ছয়টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন বাজে সাড়ে ১০টা। এখনো লাইনের মাঝখানে। সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। ১২ থেকে ১৩ দিন হয়ে গেল, জমিতে কোনো ইউরিয়া সার দিতে পারিনি। রোববারও লাইনে দাঁড়িয়ে সার পাইনি। সার না দিতে পারায় খেতের ধানগাছ লাল হয়ে যাচ্ছে।’
ডিলার আলম হোসেন বলেন, ‘ইউরিয়া ও এমওপি সারের বরাদ্দ কৃষকদের চাহিদার তুলনায় কম। চলতি সপ্তাহে ৪০৭ বস্তা ইউরিয়া সার পেয়েছি। কৃষকদের যে লাইন, এই সার আজই শেষ হয়ে যেতে পারে। আজও অনেক কৃষককে সার দেওয়া যাবে না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলায় সারের কোনো সংকট নেই। তবে কিছু এলাকায় সারের চাহিদা কম আবার কিছু এলাকায় বেশি। আমরা বিষয়টি সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’
গাইবান্ধা, নওগাঁয় সার জব্দ
রোববার রাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শাহ্ আলম আকন্দের বাড়ির গুদামে অবৈধভাবে মজুত ৮০০ বস্তা টিএসপি সার জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় গুদামের মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজা-ই-মাহমুদ বলেন, জব্দ করা সার প্রকৃত দরে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করে টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নওগাঁর মহাদেবপুরে একই দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসানের নেতৃত্বে সদর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬০ বস্তা সার জব্দ করা হয়। মেসার্স গোবিন্দ ট্রেডার্সের মালিক অমল কুমার খৈতান নামের এক ব্যবসায়ী এ সার মজুত করেছেন। অবৈধভাবে সার মজুতের দায়ে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ইউএনও বলেন, জব্দ করা সার উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হবে।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর নওগাঁর পোরশা উপজেলার শিশা বাজার এলাকা থেকে এক ডিলারের গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুত ছয় হাজার বস্তা সার উদ্ধার করে প্রশাসন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ ও গাইবান্ধা]