যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরে তিনি ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কাল মঙ্গলবার দিনের প্রথম ভাগে কলম্বো থেকে ডোনাল্ড লুর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। গত জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে এটি তাঁর প্রথম সফর।
সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের প্রথম দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় ডোনাল্ড লুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
ডোনাল্ড লুর সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা স্পষ্ট করেছেন। ওই চিঠির শুরুতে বাইডেন ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্ব’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন; যা থেকে স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে। আর অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হিসেবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক উন্নয়ন; জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি; বৈশ্বিক স্বাস্থ্য; মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ডোনাল্ড লু ঢাকায় এলে এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি অন্য কোন বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেবে, সে ধারণা পাওয়া যাবে।
তবে গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকারসহ সামগ্রিক মানবাধিকারের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই এ বিষয়গুলো আলোচনা থেকে হারিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন–পরবর্তী পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়গুলোকে তেমনভাবে আর প্রকাশ্যে আনছে না। এমনকি লুর বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতেও প্রসঙ্গগুলো নেই। তবে এ বিষয়গুলো যাতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পথে বাধা না হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে সহযোগিতার অন্য উপাদানগুলোকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চাইছে।
আরেক কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পর্বে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসেছিলেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত মাসে বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন টিকফা ফোরামের বৈঠকের পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন ব্যবসা ও বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে, সেখানে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচনায় থাকবে বলে ঢাকার কর্মকর্তাদের মত।