ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস বাংলাদেশ–ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ককে বহুমাত্রিক কৌশলগত অংশীদারত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই সম্পর্ক বজায় রাখতে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সদর দপ্তরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ওই অঙ্গীকারের কথা জানান।
আজ শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে,ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণ যাতে সুগম হয় এবং জিএসপি প্লাস সুবিধার আবেদনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ইইউর সমর্থনের কথা জানান। তিনি ইইউ-বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে ইইউ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সকে ইউরোপীয় ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একত্র হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি শ্রম খাতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশের অভিযোজনের প্রশংসা করেন।
শাহরিয়ার আলম অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতে ইইউর আরও বৃহত্তর ভূমিকার বিষয়ে ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসকে জানান।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুই পক্ষের সম্পর্ককে পরের ধাপে উত্তরণের লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
উৎপাদন খাতে কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে তা অব্যাহত রাখাসহ সরকারের জনমুখী নীতি সম্পর্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আলোচনায় অবহিত করা হয়। বাংলাদেশের শ্রম খাতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চলমান প্রয়াসকে সীমিত করার বাস্তব পরিস্থিতিও আলোচনায় তুলে ধরা হয়।
গতকাল সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারে ‘ইপিসি টকস জিওপলিটিক্স’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে ভূমিকা, ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক শান্তি, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস পিটার্সের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের জন্য ইআইবির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগকে কাজে লাগানোর সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) মহাসচিব স্টেফানো স্যানিনোর সঙ্গেও একটি বৈঠক করেন। তাঁদের সামগ্রিক ওই আলোচনায় অংশীদারি সহযোগিতা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্যানিনো বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ইইএএসের মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, ইউরোপে চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মীর সুযোগ এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানিসংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন।