দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে মশালমিছিল করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। তফসিলের প্রতিবাদে মিছিলকারী বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অপরদিকে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দমিছিল করেছে নগর আওয়ামী লীগ।
এদিকে তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। পাশাপাশি মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের ভোট গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন এখন জনগণের প্রতিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই একতরফা তফসিল ঘোষণার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। পাহাড়তলী নয়াবাজারে পাহাড়তলী থানা যুবদলের নেতা–কর্মীরা মশালমিছিল বের করেন। অপরদিকে মহানগর যুবদল চট্টেশ্বরী রোডে ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রদল বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় মশালমিছিল বের করে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে মহানগর ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশ হামলা করলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
বুধবার রাত আটটার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটিতে চাল, ডালসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য ছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলমের তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকটি সড়কের পাশে দাঁড়ানো ছিল। চালক বাইরে ছিলেন। কে বা কারা বোতলে আনা জ্বালানি তেল চালকের সিটে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে দ্রুত আগুন নেভানোয় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দমিছিল করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরের দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয় থেকে এই মিছিল বের করা হয়।
নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির কাজ হলো দেশে অরাজকতা করা। জনগণ উন্নয়নের পক্ষে। আগামী নির্বাচনে জনগণ নৌকা প্রতীককে আবারও বিজয়ী করবে। নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। তফসিলকে স্বাগত জানাই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি–জামায়াত যে অরাজকতা করছে সারা দেশে, তা নিন্দনীয়।’
মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান প্রমুখ।
তফসিল ঘোষণার পর বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম আলাদাভাবে টহল দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রাণী প্রামাণিক জানান, নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সতর্ক পাহারায় রয়েছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চট্টগ্রামে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল থেকে তাঁরা চট্টগ্রাম জেলায় টহলের দায়িত্বে আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিজিবি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামে টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া আরও বিজিবি ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।