আইনজীবী হিসেবে খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর পেশাজীবন বেশ দীর্ঘ। বয়স এখন ৭৭ বছর চলছে। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামে আইন পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এরপর সুপ্রিম কোর্টে কাজ করেছেন। কিন্তু চোখে দেখতে পান না খাদেমুল ইসলাম।
এই প্রতিবন্ধকতা খাদেমুল ইসলামের আইনজীবী হওয়ার পথে বাধা হতে পারেনি। তিনি দেশের প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবী। তবে পেশাজীবনের তাঁর সাড়ে চার দশকের এই যাত্রা মোটেও সহজ ও সুখকর ছিল না।
মুঠোফোনে কথা হয় খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যখন আইন পেশায় ঢুকি, কেউ বিশ্বাস করতে চাইত না যে আমি এ কাজ করতে পারব। সবাই ভাবত, চোখে দেখতে পায় না, এ কীভাবে আইনজীবী হবে! ওই সময় সুযোগ-সুবিধাও এখনকার মতো ছিল না।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের জন্য ‘ব্লাইন্ড ল গ্র্যাজুয়েটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেটস সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন মোশাররফ হোসেন মজুমদার। এ সংগঠনে তালিকাভুক্ত আইনজীবীর সংখ্যা ৪০। হাইকোর্টে আছেন ১০ থেকে ১৫ জন। অনেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।
খাদেমুল ইসলামের বাবা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী আইনজীবী ছিলেন। খাদেমুল ইসলাম জানালেন, বাবা মারা যাওয়ার আগে সাত থেকে আট বছর তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, শিখেছেন। তাই প্রতিবন্ধকতা কিছুটা কম হয়েছে। কাজের জায়গায় কিছুটা সুবিধাও পেয়েছেন।
খাদেমুল ইসলাম একা নন, দেশে ৪০ থেকে ৪৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবী বিভিন্ন আদালতে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সেই সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের নিয়ে আগে মানুষের মধ্যে যেসব নেতিবাচক চিন্তা ছিল, তা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু একটা বাধা এখনো আছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
মোশাররফ হোসেন মজুমদার আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। ২০০২ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের তালিকাভুক্ত আইনজীবী তিনি। মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর টাইফয়েড হয়। এরপর দৃষ্টিশক্তি হারান। কিন্তু দমে যাননি।
স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন মোশাররফ। পাস করার পর ১৯৮৩ সালে জজকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ১৯৮৯ সালে হাইকোর্টে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি পান। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে সেন্ট্রাল ল কলেজেও পড়াচ্ছেন।
আমি চোখে দেখি না, আমার কাছে কেন মক্কেল আসবে? দীর্ঘদিন মক্কেলের কাছ থেকে ফি নিইনি। মক্কেলকে শুধু কোর্টের খরচ দিতে বলতাম। এভাবেই যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছে।মোশাররফ হোসেন মজুমদার, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
শুরুর দিককার স্মৃতি হাতড়ে মোশাররফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চোখে দেখি না, আমার কাছে কেন মক্কেল আসবে? দীর্ঘদিন মক্কেলের কাছ থেকে ফি নিইনি। মক্কেলকে শুধু কোর্টের খরচ দিতে বলতাম। এভাবেই যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছে।’
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলেছে উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘এখন আর আগের সেই দিন নেই। এখন মক্কেলরা ভরসা করে আমাদের কাছে আসছেন। যিনি সেবা নিচ্ছেন, তিনি অন্য মক্কেলদেরও পাঠাচ্ছেন। তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের সঙ্গে স্বাভাবিক আইনজীবীদের আয়ে বৈষম্য রয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের জন্য দেশে ভিজ্যুয়ালি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস) নামে একটি সংগঠন রয়েছে। মোশাররফ হোসেন মজুমদার এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের জন্য ‘ব্লাইন্ড ল গ্র্যাজুয়েটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেটস সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন মোশাররফ। এ সংগঠনে তালিকাভুক্ত আইনজীবীর সংখ্যা ৪০। হাইকোর্টে আছেন ১০ থেকে ১৫ জন। অনেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।
আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার ও আইনজীবী এ এম মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে বললেন, তাঁদের বন্ধু-সহপাঠীদের অনেকেই এখন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ বিচারপতি হয়েছেন। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা নানা জটিলতার জেরে বিচারক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারছেন না।
কাজ কীভাবে করছেন? মোশাররফ প্রথম আলোকে জানালেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের কাজ আগের চেয়ে সহজ করেছে প্রযুক্তি। কম্পিউটার-মুঠোফোনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মামলার নথিপত্র পড়া যাচ্ছে। তবে মামলার বিভিন্ন ধারা ব্রেইল নথি হিসেবে পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা নিজেরাই ব্রেইলে নোট করে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন।
মোশাররফ বললেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়ে শুনানিতে অংশ নেন, যাতে তথ্যগুলো তাঁদের মাথায় গেঁথে যায়। তাঁরা অনেক বেশি মনে রাখতে পারেন। তবে বিভিন্ন নথির বিষয়গুলো সহকারীরা পড়ে দেন।
আয়করের মতো জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা। তাঁদেরই একজন এ এম মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ও চোখে দেখতেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেন। কিন্তু থেমে থাকেননি।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করাই নয়, তালিকাভুক্ত আইনজীবী হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা, তাতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।স্বপন চৌকিদার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ
১৯৯৪ সাল থেকে ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন মোসলেহ উদ্দিন। ২০০১ সাল থেকে আয়কর আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। মোসলেহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুর দিকে আয়করের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসতে অনেকে ভয় পেতেন। এখন আমার কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ ফাইল থাকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অনেকেই আমার কাছে আসেন।’
ছেলেকেও আইনজীবী বানিয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন। এখন বিভিন্ন কাজে ছেলেও সাহায্য করতে পারেন তাঁকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন রেজমিন ইমরোজ। বাবা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম জিপিওর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মা শাহনাজ পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। রেজমিনের স্বল্প দৃষ্টি (লো ভিশন)।
চলতি বছরের মার্চে ঢাকা জজকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন রেজমিন। তিনি হাইকোর্টে শিক্ষানবিশ হিসেবেও কাজ করছেন। বর্তমানে রেজমিন তালিকাভুক্ত একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী আইনজীবী। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রেজমিন বলেন, একে নারী, তার ওপর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, কতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন, এ নিয়ে মক্কেলদের অনেকের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিচারকেরা বেশ সহায়তা করেন।
জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৭ সালে একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। এর ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিচারক পদে নিয়োগ পেতে হলে প্রার্থীকে প্রাথমিক বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হবে। এরপর হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এ সময় প্রার্থীর চোখে কোনো রোগ বা অস্বাভাবিকতা আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় টিকে আছেন। দক্ষতা আছে বলেই তাঁরা টিকে আছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কাজ করতে পারেন না বা পারবেন না, এটা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা।শাহদীন মালিক, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
নিয়ম অনুযায়ী, তির্যক দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি কিংবা চোখে এমন কোনো রোগ বা সমস্যা আছে, যা প্রার্থীকে ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে অক্ষম করে তুলতে পারে, সে ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীকে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়। আর কাছের ও দূরের দৃষ্টিশক্তির জন্য মানদণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সবার মতে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের বিচারক হওয়ার পথে এই নিয়ম সবচেয়ে বড় বাধা। এ ছাড়া বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীন বিচারক নিয়োগ বিধিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শ্রুতলেখক দেওয়ার নিয়ম নেই। এ জন্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন অধরা রয়ে যাচ্ছে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদীপ দাস পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি তিনি। মাঝে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় চারবার শ্রুতলেখকের জন্য আবেদন করেন তিনি। প্রতিবাদ হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনবার শ্রুতলেখক ছাড়াই সাদা খাতা জমা দিয়েছেন। এখন বয়স ৩২ পেরোনোয় আর আবেদন করতে পারছেন না।
সুদীপ বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারসংক্রান্ত আইন নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর পক্ষে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই আইনজীবী জানান, রিটটি বাতিল হয়ে গেছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (ড্রাফটিং) পদে কর্মরত মো. স্বপন চৌকিদার। দেশে তাঁর আগে আর কেউ প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেননি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন।
স্বপন জানান, ২০০৮ সালে তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে বাধা পান। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় বিসিএস দিতে পারেননি তিনি। পরে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহায়তায় আদালতের দ্বারস্থ হন স্বপন। তাঁকে বিসিএসে অংশ নেওয়া সুযোগ করে দিতে সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) নির্দেশ দেন আদালত।
এখানেই স্বপনের লড়াই শেষ হয়নি। ৩৩তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলেও শ্রুতলেখক জটিলতার কারণে লিখিততে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। ওই সময় এটা নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। তা নজরে এলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য একাধিক শ্রুতলেখকের অনুমতি দেয় পিএসসি।
স্বপন চৌকিদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু বিসিএস নয়, জুডিশিয়াল সার্ভিসে পরীক্ষা দেওয়ার জন্যও মামলা করেছিলাম। তবে সেটার বিষয়ে এখনো আমলে নেওয়া হয়নি।’
একসময় সরকারি চাকরির নিয়োগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কোটা ছিল। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলনের জেরে অন্যান্য কোটার সঙ্গে সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে সংশ্লিষ্ট সবার। স্বপন চৌকিদার বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করাই নয়, তালিকাভুক্ত আইনজীবী হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা, তাতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার ও আইনজীবী এ এম মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে বললেন, তাঁদের বন্ধু-সহপাঠীদের অনেকেই এখন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ বিচারপতি হয়েছেন। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা নানা জটিলতার জেরে বিচারক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারছেন না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের সংগ্রাম নিয়ে কথা হয় সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় টিকে আছেন। দক্ষতা আছে বলেই তাঁরা টিকে আছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কাজ করতে পারেন না বা পারবেন না, এটা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীদের বিচারক হতে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহদীন মালিক বলেন, কেন তাঁরা বিচারক হতে পারবেন না? বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার, মুঠোফোন কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। যাঁরা কম্পিউটারজগতের সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আইনজীবীরা বিচারক হতে পারবেন না, এমন চিন্তা করছেন।