ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের আয়োজিত অধ্যাপক আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা ও স্মারক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের আয়োজিত অধ্যাপক আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা ও স্মারক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি

দেশ গণতন্ত্রে পিছিয়ে, তবে বায়ুদূষণে শীর্ষে: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

গণতন্ত্রে পিছিয়ে থাকলেও বায়ুদূষণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে আছে বলে উল্লেখ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বায়ু তিন দিন এমন ছিল যে বিশ্বের সেরা দূষণ। যেখানে নিশ্বাস নেওয়াই কঠিন ছিল।

অধ্যাপক আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা ও স্মারক পুরস্কার-২০২৪-এর আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আহমদ শরীফের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ ভবনে এই স্মারক বক্তৃতা ও পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করে স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ। এবার ড. আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

সুবিধাবাদীদের ‘ভিক্ষুক’ বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ধনী হলেও ভিক্ষুক হতে পারেন উল্লেখ করে এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হচ্ছে, বিদেশি মুখাপেক্ষী হচ্ছে। তাদের নির্বাচন হবে কি হবে না, কেমন করে হবে, সেটার জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় বিদেশিদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতাকে মুক্তির জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি। এর প্রমাণ হচ্ছে ভিক্ষুকের মনোবৃত্তি রয়ে গেছে।’

সাহিত্যচর্চা এখন সবচেয়ে জরুরি বলেও মনে করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, সাহিত্যের মধ্যে ইতিহাস আছে, দর্শন আছে।

দেশে এখন যে সমস্যা তা রাজনৈতিক উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নৈতিকতার যে অধঃপতন ঘটছে, সেটা আরও ঘটতে থাকবে। সমস্যাটা নৈতিক নয়, সমস্যাটা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। সংস্কৃতির চর্চা আদর্শ নিরপেক্ষ হবে না। এই সংস্কৃতির চর্চা শুধু বিনোদনের জন্য হবে না। সংস্কৃতির চর্চা ব্যক্তিগত উৎকর্ষের জন্য হবে না। এই সংস্কৃতির চর্চা হবে মুক্তির জন্য। মুক্তি মানেই হচ্ছে সমষ্টিগত। ব্যক্তি কখনোই মুক্ত হতে পারে না, যদি না সামষ্টিক মুক্তি আসে।

ড. আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা পাঠ করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে নৈতিক উন্নতি সাধন করতে হবে। নৈতিক উন্নতির কার্যক্রম বাদ দিয়ে যে উন্নয়ন চিন্তা, তা খণ্ডিত ও আংশিক।

বর্বরতা অতিক্রম করে মানুষ যে সভ্যতায় উত্তীর্ণ হয়েছিল, সেই মানুষ আবার বর্বরতায় ফিরে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গড়ে উঠতে এবং উন্নতি করতে হলে জঙ্গলের নিয়ম ছেড়ে সভ্যতার নিয়ম তৈরি করে সামনে চলতে হবে।

ড. আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার গ্রহণ শেষে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে সভ্যতার চাকা পেছন দিকে যাচ্ছে।’ দেশে বিশ্বাসের একটা বিশাল পতন ঘটেছে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘স্বাধীনতার যুদ্ধ আমরা করেছি বিদেশি শক্তির সঙ্গে। আজ আমাদের যে যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সেটা মুক্তির যুদ্ধ। সে যুদ্ধ কোনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে নয়। আজকের যুদ্ধ আমাদের মধ্যে যে পাপ, পচন, লোভ, ক্ষুদ্রতা, হীনতা; তার সঙ্গে। এই যুদ্ধ থামবে না। চলতেই থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সৈয়দা নাজনীন আখতারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফকরী। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আহমদ শরীফের সংক্ষিপ্ত জীবন পাঠ করেন দোলনপ্রভা, অধ্যাপক আবুল কাসেমের সংক্ষিপ্ত জীবন পাঠ করেন তাহা ইয়াসিন এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবন পাঠ করেন দিল আফরোজ।