দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পরিচালনা কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ।
বনভোজনে গিয়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তি আধা কেজি করে খাসির মাংস খেয়েছেন! সঙ্গে ছিল আরও আধা কেজি করে মুরগির মাংস। দইসহ অন্যান্য খাবারও ছিল। উপহার হিসেবে পেয়েছেন একটি করে কাশ্মীরি শাল।
কিন্তু ওই বনভোজনে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি নথিপত্রের ওই তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন, বনভোজনের দিন দুপুরে কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিমাণ একেবারে কম ছিল না। তবে আধা কেজি মাংস থাকা বা খাওয়া অসম্ভব। মুরগির মাংসও এতটা থাকার কারণ নেই। আর বাজার থেকে কেনা সাধারণ শালকেই কাশ্মীরি বলে চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (বাইগাম) এমনই আর্থিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে সরকার গঠিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে। গত ২৮ মার্চ চার সদস্যের কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবতে বসেছে। স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে যৌন হয়রানির অভিযোগ।
৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনিতে সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রবীণদের এক বেলার খাবারে আধা কেজি খাসির মাংস রাখা হলে বা আসলেই খেয়ে থাকলে তা কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত হয়নি।শামসুন্নাহার নাহিদ, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ
সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন এবং সরেজমিনে খোঁজখবর করে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি যে প্রবীণ সদস্যরা পরিচালনা করেন ও প্রতিষ্ঠানে যাঁরা চাকরি করেন, উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসক। বাতিল করা হয়েছে প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত কমিটি। এই কমিটিই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।
প্রতিষ্ঠানটিতে ‘তুঘলকি কাণ্ড’ চলছে বলে প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছেন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক মো. মোকতার হোসেন। তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মোকতার হোসেন বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মরতদের অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ।
তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে অধিকতর তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক মো. মোকতার হোসেন।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই খাবারের এসব হিসাব করা হয়েছিল। অতিরিক্ত খরচ হয়ে থাকলে তদন্ত কমিটি সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।আমির হোসেন মোল্লা, বিলুপ্ত কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা
জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ অনুযায়ী, ৬০ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিরা প্রবীণ। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাসভবনে ১৯৬০ সালে বাইগাম গড়ে তোলেন। বর্তমানে আগারগাঁওয়ে প্রবীণ ভবনে হাসপাতাল ও পাশে একটি ভবনে প্রবীণ নিবাস রয়েছে। নিবাসে বাসিন্দা আছেন ৩৬ জন। নিবাসটিও ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে একধরনের নির্জীব পরিবেশ দেখা গেল। হাসপাতালটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রসহ প্রবীণদের জন্য জরুরি অনেক কিছুই নেই। কর্মরতদের কয়েকজন বললেন, বেশির ভাগ কর্মীর নিয়োগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যখন যে কমিটি এসেছে, তারাই অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে। অর্থাৎ দুর্নীতি, অনিয়ম প্রতিষ্ঠানটিতে ধারাবাহিকভাবেই চলছে।
অনিয়ম প্রসঙ্গে বিলুপ্ত কমিটির সদস্যরা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। আর অভিযুক্ত কর্মীরা বলছেন, তাঁরা শুধু কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১০ লাখ টাকা। এ অর্থ থেকে কর্মরতদের বেতন ও ঢাকার বাইরের ৯২টি শাখায় অনুদান দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন অনিয়মের ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় করেনি। ফলে কর্মরতদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
সরকারি বরাদ্দে বা সরকারের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি–অনিয়ম হবে, তা অবাক করার বিষয় নয়, এটি স্বাভাবিক।ড. ইফতেখারুজ্জামান, দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৯০৪ জন প্রবীণ সদস্য ৭ জানুয়ারি বনভোজনে গিয়েছিলেন। ৯০৪ জনের জন্য খাসির মাংস কেনা হয়েছিল ৬০০ কেজি (জনপ্রতি ৬৬৪ গ্রাম)। মুরগি কেনা হয়েছিল ৪০০টি।
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, শুধু খাবার নয়, ৯০৪ জনকে উপহারের জন্য কাশ্মীরি শাল কেনা হয় ১ হাজার ৫০০টি। এ শাল কেনা বাবদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা একটি ভাউচারে পরিশোধ করা হয়েছে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনিতে সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রবীণদের এক বেলার খাবারে আধা কেজি খাসির মাংস রাখা হলে বা আসলেই খেয়ে থাকলে তা কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত হয়নি।
জানতে চাইলে প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দা, প্রায় ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাগল নাকি যে এই বয়সে এক বেলা আধা কেজি খাসির মাংস খাব?’
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, শুধু খাবার নয়, ৯০৪ জনকে উপহারের জন্য কাশ্মীরি শাল কেনা হয় ১ হাজার ৫০০টি। এ শাল কেনা বাবদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা একটি ভাউচারে পরিশোধ করা হয়েছে। সাভারের হেমায়েতপুরে একটি রিসোর্টে যাওয়ার জন্য বাস ভাড়া করা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা করে ২৫টি। ভেন্যুভাড়া দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা। প্রকৃত খরচের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর পাশাপাশি জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
বিলুপ্ত কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই খাবারের এসব হিসাব করা হয়েছিল। অতিরিক্ত খরচ হয়ে থাকলে তদন্ত কমিটি সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
বনভোজনে অংশগ্রহণকারীরাই অভিযোগ করেছেন, দেশে তৈরি খুবই নিম্নমানের শাল দিয়ে কাশ্মীরি শালের নাম জাহির করা হয়েছে। অতিরিক্ত শাল কেনা প্রসঙ্গে আমির হোসেন মোল্লার দাবি, ‘যা বাড়তি ছিল, তা স্টোরে জমা রাখতে বলা হয়েছিল, যাতে পরবর্তী বনভোজনে কাজে লাগানো যায়।’
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার কেভি সাবস্টেশন (ট্রান্সফরমার) স্থাপনের দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। ট্রান্সফরমার স্থাপনের জন্য ৭২ লাখ টাকায় নির্ধারিত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত বছরের ১০ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৪০০ কেভি ট্রান্সফরমার চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ লাখ টাকা। তবে এ বিল দেওয়ার প্রক্রিয়ায়ও অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রবীণ হাসপাতালের জন্য কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন কেনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। পুরোনো মডেলের (২০১৭-২০১৮) মেশিন কিনে বিল দেওয়া হয়েছে নতুন মডেলের (২০২১-২০)।
নিয়োগের আগে জনবলের সঠিক চাহিদা নিরূপণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের তিনটি গাড়ি ব্যবহার, দোকানভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রবীণ বার্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সের চালানের টাকা নির্ধারিত খাতে জমা দেওয়া হয়নি। বার্ষিক ক্যালেন্ডার ছাপানোর ক্ষেত্রে কোনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি।
সংস্থার মোট স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এই এফডিআরের ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ভাঙানো হয়েছে, যার প্রবৃদ্ধিসহ মূল্য ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। এই অর্থ কর্মচারীদের বেতন–ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ এই টাকা প্রবীণদের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা।
প্রতিষ্ঠানটিতে কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ও জনবলকাঠামো–বহির্ভূত ৫০ জন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের শর্ত মানা হয়নি। নিয়োগের আগে জনবলের সঠিক চাহিদা নিরূপণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের তিনটি গাড়ি ব্যবহার, দোকানভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে কাজ করছেন প্রায় ১৮০ জন। গত বছরের ২০ মার্চ প্রতিষ্ঠানের এক নথিতে জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এমনকি রাজনৈতিক সুপারিশ আসতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অনেকের নিজস্ব লোক থাকার পরও তাদের চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে না। নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্য তাঁদের সন্তান ও আত্মীয়ের চাকরির জন্য সুপারিশ করেছেন। তাই সভায় নিজস্ব লোক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। এই নথিতে মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত), প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), উপপরিচালকসহ (প্রশাসন) অনেকে সই করেছেন। এ নথিতে কাদের নিয়োগ করা হবে, তাদের নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করে হিসাব সফটওয়্যার স্থাপন করে তাতে অভিজ্ঞতা নেই, এমন একজনকে তড়িঘড়ি করে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। তবে হিসাব সফটওয়্যারটি এখন পর্যন্ত কোনো কাজে লাগেনি।
অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থেকেও প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন বিভাগে দায়িত্ব পালন করা উপপরিচালক বদরুল আহসান, সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম এবং প্রতিষ্ঠানের ৯২টি শাখা এবং যানবাহনের দায়িত্বে থাকা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বদরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে শুধু তা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছি। এলপিআরে যাওয়ার পর কাজ করতে চাই আবেদন করলে কমিটিই কাজ করার অনুমতি দিয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানটিতে ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দেন আশরাফুল আলম। পদোন্নতি পেয়ে তিনি সহকারী পরিচালক হয়েছেন। তাঁর দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি পেয়েই তিনি বর্তমান দায়িত্বে এসেছেন।
কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে শুধু তা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছি। এলপিআরে যাওয়ার পর কাজ করতে চাই আবেদন করলে কমিটিই কাজ করার অনুমতি দিয়েছেবদরুল আহসান, উপপরিচালক
আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের একাধিক নারী কর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যৌন হয়রানির শিকার একাধিক নারী জানান, সহকারী পরিচালকের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আটকে আছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নারী কর্মীরা এ ধরনের হয়রানির শিকার বেশি হয়েছেন। গত ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির একজন নারী কর্মী। ১০ মে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। অন্যদিকে অভিযুক্ত সহকারী পরিচালককে বর্তমানে প্রবীণ হাসপাতালের ফার্মেসি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে আশরাফুল আলম প্রথম আলোর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানা গেছে।
গত তিন বছরে বাইগামের অ্যাম্বুলেন্স থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। কিন্তু অভিযোগ আছে, অ্যাম্বুলেন্সটি সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান সরকার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
এ জন্য খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। এর বাইরেও নিয়োগবাণিজ্যসহ অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে আব্দুর রহমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোনো কর্মীর পক্ষে গাড়ি ব্যবহার বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। আর জনবল নিয়োগ বা অন্যায়ভাবে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আপত্তি করেছি।
কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। আগের কমিটির আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান একজন মন্ত্রীর বোন। সর্বশেষ কমিটি ৫২ বছর বয়সী ওই নারীর চাকরি স্থায়ী করেছে।’ বর্তমানে এই কর্মকর্তাকে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার। তাঁরা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি বরাদ্দে বা সরকারের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি–অনিয়ম হবে, তা অবাক করার বিষয় নয়, এটি স্বাভাবিক।
তবে মনে রাখতে হবে, মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। দেশে প্রবীণদের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। তাই প্রতিষ্ঠানটি যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, তা দেখতে হবে। একইভাবে অনিয়ম–দুর্নীতির সঙ্গে প্রবীণ সদস্যসহ যাঁরাই জড়িত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় এনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।