রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের হত্যা মামলার পুনঃ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং কারাবন্দীদের মুক্তিসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁদের পরিবার ও স্বজনেরা। আজ বুধবার রাতে তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করবেন।
অন্য দাবিগুলো হলো পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত বিডিআর সদস্যদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা বাতিল, চাকরিচ্যূতদের পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং পিলখানা হত্যা মামলায় পুনঃ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ১০টার দিকে বিডিআরের চাকরিচ্যুত সদস্যরা ও কারাবন্দী সদস্যদের স্বজনেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি শাহবাগের দিকে এলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকারের নেতৃত্বে স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যান। আর অন্যদের মধ্যে একটি অংশ শাহবাগ থানা সংশ্লিষ্ট সড়কে অবস্থান নেন, আরেকটি অংশ শহীদ মিনারে ফিরে যান।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে ফিরে এসে সন্ধ্যায় মাহিন সরকার শাহবাগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সারা রাত শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। যদি আমরা ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না পাই, কোর্ট ও সরকারের কাছ থেকে অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট না পাই, তাহলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শাহবাগ ব্লকেড করা হবে। একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
অন্যদিকে শহীদ মিনারে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য শেখ আবদুর রহমান কারাবন্দী বিডিআর সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি চান। তিনি বলেন, যাঁদের চাকরি অবৈধভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যাদের জেল খাটানো হয়েছে, তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়াসহ ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না।
চাকরিচ্যুত বিডিআরের ৭৬তম ব্যাচের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৭৬তম ব্যাচের রিক্রুট ছিলাম। ওই সময় আমি প্রশিক্ষণে ছিলাম। একজন নবীন সৈনিক কোনোভাবেই সিনিয়রের কথা ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারেনি। আমাদের দ্বারা বিদ্রোহ সম্ভব ছিল না।’
রফিকুল আরও বলেন, ২৬ জুন শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও ২৪ জুন তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি বলেন, চাকরি চলে যাওয়ায় অনেক বিডিআর সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
চাকরিচ্যুত এক বিডিআর সদস্যের সন্তান মো. একরামুল হক। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর বয়স ছিল পাঁচ বছর। তারা তখন পিলখানাতেই ছিলেন। হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার পর কেউ একজন এসে তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলেছিল। তাঁর বাবা এ ঘটনায় এক বছরের কারাদণ্ড পান। জেল থেকে বেরিয়ে এক বছর পরই তিনি মারা যান। যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন অনেক কষ্টে কাটিয়েছেন।
চাকরিচ্যুত বিডিআরের আরেক সদস্যের আত্মীয় আল আমিন আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, দাবি আদায়ে আজ তাঁরা সারা রাত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় রমনা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পর যাঁরা চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করছেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার তাঁদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এটি ছিল দেশের ইতিহাসের একটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডর ঘটনা। তৎকালীন সরকার এই হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ হিসেবে চালিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে হাজার হাজার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের যড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযুক্ত করা হয় এবং গণহারে চাকরিচূ্৵তিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে।
স্মারকলিপিতে পিলখানার বাইরের ব্যাটালিয়ন ও অন্য সব স্থাপনায় গণহারে চাকরিচূ৵ত বিডিআর সদস্যদের নির্বাহী আদেশে ভূতাপেক্ষনীতিতে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের ২(ঙ) ধারা বাতিল করে কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং পিলখানার হত্যাকাণ্ডে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।