বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের স্টল
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের স্টল

বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘দৃষ্টিজয়ী’ শব্দ যোগ করার আহ্বান

বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘দৃষ্টিজয়ী’ শব্দ যোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজিয়া জাবীন। এক খোলা চিঠিতে এ আহ্বান জানান তিনি। আগামীকাল বুধবার বাংলা একাডেমি কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চিঠি মহাপরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর খোলা চিঠি’ উপস্থাপন করা হয়। তবে ওই উৎসবে অসুস্থতার কারণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই তাঁর কাছে এ চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে।

স্পর্শ ফাউন্ডেশন কয়েক বছর ধরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শব্দটির বদলে দৃষ্টিজয়ী শব্দ বলা ও লেখার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এবার সর্বস্তরে শব্দ ও ভাষার মানবিক প্রয়োগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব করেছে তারা।

স্পর্শ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রথম বই বের করে এ ফাউন্ডেশন। ২০১১ সাল থেকে অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া শুরু করে তারা। এবারের বইমেলায় নতুন ১৯টি বইসহ দেড় শ বই ব্রেইলে প্রকাশ করেছে স্পর্শ ফাউন্ডেশন।

স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজিয়া জাবীন প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর লেখা ছড়ার বই ব্রেইলে প্রকাশ করেছিল স্পর্শ প্রকাশনা। থ্রিলার, জীবনী, কাব্যগ্রন্থ, রান্নার রেসিপিসহ নানা ধরনের বই ব্রেইলে প্রকাশ করেছে প্রকাশনাটি। দৃষ্টিজয়ীরা প্রতিটি বইয়ের পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ে, স্পর্শ করে পড়ে।

নাজিয়া জাবীন বলেন, উন্নত দেশগুলো বিশেষ মানুষদের শুধু আলাদা সুবিধা দেওয়ার চেষ্টাই করে না, বরং কী করে সম্মানজনক শব্দ দিয়ে তাঁদের পরিচয় করানো যায় এবং বিশেষ চাহিদা মেটানো যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবছে। যেমন ‘হ্যান্ডিক্যাপড’ শব্দ এখন আর বলাই হয় না। ‘ডিজ্যাবলড’ শব্দের বদলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘এক্সেসিবল’ শব্দ প্রয়োগে জোর দিচ্ছে তারা।

‘বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর খোলা চিঠি’তে উল্লেখ করা হয়েছে, দৃষ্টিজয়ীরা বইমেলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশনের স্টলের পুরো দায়িত্বে থাকেন। তাঁরা মুঠোফোন চালাতে পারেন। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপও চালান। ফোনে অ্যাপ চালিয়ে রাইড সার্ভিস ডেকে আনেন। মেট্রোরেলেও আসা-যাওয়া করতে পারেন। এই দৃষ্টিজয়ীদের অনেকেই মাস্টার্স পাস করেছেন। অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় ভালো চাকরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।

খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে হলে শব্দভান্ডারে মৌলিকতা, কাব্যিকতা, মানবিকতার মিশেলে নতুন নতুন শব্দ যোগ করতে হবে। আর নতুন শব্দকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চেনানোর সহজ ও ভরসাযোগ্য জায়গা হলো বাংলা একাডেমির অভিধান।