আন্দোলনের সময় আহত হওয়া ব্যক্তিদের দেখতে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। আজ বুধবার দুপুরে
আন্দোলনের সময় আহত হওয়া ব্যক্তিদের দেখতে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। আজ বুধবার দুপুরে

চট্টগ্রামে সারজিস আলম

১৬ বছর কথা বলার সাহস করেননি, ১৬ দিনে সব সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, বিগত ১৬ বছর ধরে যেসব মানুষ কথা বলার সাহস করেননি, ৫৩ বছরে যাঁরা রাস্তায় নামার খুব একটা সাহস করেননি, তাঁরাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাচ্ছেন ১৬ দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাক। এই মানুষগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠীগত ছোট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রাজপথে নামছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ কথা বলেন সারজিস আলম। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।

ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে আন্দোলন-বিক্ষোভ হচ্ছে, দাবি করে সারজিস আলম বলেন, এত বড় একটি ক্ষতপূর্ণ রাষ্ট্রের সংশোধনের জন্য সময় প্রয়োজন। সেই সময়টুকু না দিয়ে যদি বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করা হয়, এর মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের স্থিতিশীল অবস্থা হওয়ার জন্য যে গতি দরকার, তাতে তাঁরা বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের অবশ্যই ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

বিগত সরকার বাংলাদেশকে দুর্নীতির দেশে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন,‘আমরা বৈষম্যর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কোনো একক বৈষম্য নয়। পুরো বাংলাদেশের সব সেক্টরের বৈষম্য। ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে দুর্নীতির বাংলাদেশে পরিণত করেছে। আমরা যদি এতে কাজ করতে যাই, মাথা থেকে গোড়া পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে। এখন মাথাগুলো শুরু হয়েছে, দিন দিন প্রতিটি ধাপে যাওয়া হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আপনারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিন। আপনার জায়গা থেকে সমালোচনা করুন। আমাদের কাছে আসুন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হোক কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে আপনাদের বসার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু পূর্বশর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনার জন্য তিন থেকে ছয় মাস অবশ্যই সময় দিতে হবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এত দিন যে কথাগুলো বলা উচিত ছিল, আপনারা বলতে পারেননি। কিংবা আপনাদের বলতে দেওয়া হয়নি। এটিই সত্য। যে ঘটনাগুলো দেখেছেন, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেননি, সে বিষয়গুলো প্রকাশ করুন। কারণ, এটি আপনাদের দায়বদ্ধতা।’

হাসপাতালে পরিস্থিতি নিয়ে সারজিস বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতালে গত ১৬ বছরে সিন্ডিকেট নামধারী মধ্যস্থতাকারী কিছু রক্তচোষা মানুষ তৈরি হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্য বলছি, আপনাদের টাকা খাওয়ার যে ব্যবসা, আপনারা যদি বন্ধ না করেন, তাহলে আপনার সিন্ডিকেট কীভাবে বন্ধ করতে হয়, সেটি ছাত্রসমাজ খুব ভালো করে জানে। আসুন, আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে যদি আমরা সৎ না হই, তাহলে রাষ্ট্রের কাছে অনেক কিছু আশা করে কোনো লাভ নেই। আমরা যদি রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে প্রত্যককে কাজ করতে হবে।’

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়েখ আহমদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।