বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

শিল্পকলায় যাচ্ছেন না আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া চার পরিচালক

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বিভিন্ন বিভাগে পরিচালকের পদ ৬টি। দুটি পদ অনেক দিন ধরে খালি। চারটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া পরিচালকেরা এখন অফিসে যাচ্ছেন না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে শিল্পকলা একাডেমির চার পরিচালক অনুপস্থিত।

তাঁরা হলেন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের সৈয়দা মাহবুবা করিম, গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের জ্যোতিকা পাল, সংগীত নৃত্য ও চারুকলা বিভাগের কাজী আফতাবউদ্দীন এবং প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক সোহাইলা আফসানা। চারজনের নিয়োগই দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক।

পরিচালকদের অভিযোগ, তাঁরা অফিসে যেতে চান। তবে তাঁদের অফিস করতে বাধা দেওয়া হয়, দুর্ব্যবহার করা হয়। অবশ্য শিল্পকলার কর্মকর্তাদের দাবি, পরিচালকেরাই অফিসে যান না।

পরিচালক সোহাইলা আফসানা আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন ‘নতুন মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাইনি। আমরা যখন চাকরি করতাম, তখন কি সহকর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছি?’

সোহাইলা আফসানা আরও বলেন, ‘আমার নিয়োগ ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত। পদচ্যুত করার কোনো চিঠি পাইনি।’

১৭ সেপ্টেম্বর জ্যোতিকা পাল ও সোহাইলা আফসানা শিল্পকলায় গিয়ে ফিরে আসেন। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছিলেন জ্যোতিকা পাল।

শিল্পকলা সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তার কক্ষে তালা দেন প্রতিষ্ঠানেরই কিছু কর্মকর্তা। কয়েকজনকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ থেকে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ বছর টানা মহাপরিচালক ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। গত ১২ আগস্ট তাঁর পদত্যাগের পর ৯ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান সৈয়দ জামিল আহমেদ।

পরিচালকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ আজ প্রথম আলোকে বলেন ‘সবকিছু নিয়েই কাজ চলছে। আলাদা করে এখনই কিছু বলার নেই, যা বলার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।’

তবে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৈয়দ জামিল আহমেদ শিল্পকলায় আগের মহাপরিচালকের সময় নিয়োগে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন ‘অনেকের ভেতর অনেক ক্ষোভ ছিল। এখানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রশাসনিক ও আর্থিক। ওটাকে পরিষ্কার না করলে পরের কাজগুলো করা যাবে না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব, এ রকম কোনো দলীয়করণ যেন না হয়।’

শিল্পকলার প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক পদে ছিলেন শরিফুল হক। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে অল্প সময়ের জন্য তাঁকে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে অন্য জায়গায় তাঁকে বদলি করা হয়। এর পর থেকে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ফাঁকা পরিচালক পদটি।

নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ছিলেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি। গত বছরের শেষে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে ফাঁকা পদটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনুপস্থিত চার পরিচালক। সব মিলিয়ে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে শিল্পকলা একাডেমির একজন পরিচালকও নেই।

সূত্র বলছে, শিল্পকলা একাডেমির পদবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিচালক হতে আগ্রহী। তাঁরা চান, নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে শিল্পকলার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

শিল্পকলার পরিচালকেরা যেতে পারছেন না, নাকি তাঁরা নিজেরাই আসছেন না—এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় শিল্পকলার সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদের সঙ্গে। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন ‘এ বিষয়ে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। এর বেশি এখনই কছু বলার নেই।’