স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) করা প্রকৌশলীদের জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সংস্থাটিতে আসা প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নেওয়া হয়নি। এই প্রকৌশলীদের চাকরি নিয়মিত করা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাঁদেরই তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে সংস্থাটির রাজস্ব খাতে ছয় শতাধিক প্রকৌশলীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সবশেষ ২০০৮ সালে এলজিইডিতে প্রথম শ্রেণির প্রকৌশলীদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা হয়। এরপর নতুন তালিকা আর হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত মাসের ১১ তারিখ খসড়া জ্যেষ্ঠতার তালিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এলজিইডি। তালিকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারও কোনো আপত্তি থাকলে, তা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
বিধিবিধান মেনে খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে জানাবেন। তাঁদের আপত্তি যৌক্তিক হলে আমলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।কামাল হোসেন, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা), স্থানীয় সরকার বিভাগ
একসময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করা ২৫৭ প্রকৌশলীকে আদালতের নির্দেশে সংস্থাটির রাজস্ব খাতে আত্তীকৃত করা হয়েছে। এসব প্রকৌশলীর চাকরি নিয়মিত করার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ আছে। এরপরও এক দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁরা।
উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের বিষয়ে একটি বিধিমালা রয়েছে। ২০০৫ সালের এ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাভুক্ত কোনো পদে আত্তীকৃত কর্মকর্তাদের নিয়মিত করতে হলে পিএসসির সুপারিশ লাগবে।
এলজিইডির রাজস্ব খাতের পাঁচজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে আসা সহকারী প্রকৌশলীদের সংস্থায় নিয়মিত করার বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এটি এলজিইডির নিজেদের নথিতেই উল্লেখ করেছে। এরপরও ২০১৮ সালে তাঁদের একটি বড় অংশকে পদোন্নতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবার জ্যেষ্ঠতার তালিকায় আবারও এসব প্রকৌশলীর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে ‘অন্যায়’ বলে মনে করেন তাঁরা।
উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের বিষয়ে একটি বিধিমালা রয়েছে। ২০০৫ সালের এ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাভুক্ত কোনো পদে আত্তীকৃত কর্মকর্তাদের নিয়মিত করতে হলে পিএসসির সুপারিশ লাগবে।
এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটি জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা। এতে ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। কারও আপত্তি থাকলে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আপত্তি বা মতামত জানানোর সুযোগ আছে। আপত্তির বিষয়টি যাচাই করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।
এলজিইডির রাজস্ব খাতের প্রকৌশলীরা জানান, আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালে ১৩১ জন, ২০১১ সালে ১০৯ ও ২০১৩ সালে ১৭ জনকে সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করা হয়। আত্তীকৃত এসব প্রকৌশলীকে সংস্থায় নিয়মিতকরণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই ২৫৭ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে পিএসসির সুপারিশ নেওয়া হয়নি।
এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, এসব সহকারী প্রকৌশলীকে রাজস্ব খাতে নিয়মিতকরণের বিষয়ে পিএসসির মতামত নেওয়া হয়নি।
উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে সহকারী প্রকৌশলীদের পদায়নের যে প্রজ্ঞাপন, সেখানেও নিয়মিতকরণের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ২০১০ ও ২০১১ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপনে চাকরির শর্তের ১ নম্বরে বলা হয়েছে, নিয়মিতকরণের আদেশ জারির তারিখ থেকে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা গণ্য হবে। তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে এই প্রকৌশলীদের চাকরি নিয়মিতকরণের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
জ্যেষ্ঠতার এই জটিলতা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে দেওয়া চিঠিতে তাদের মতামত তুলে ধরে। ওই চিঠিতে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আত্তীকৃত ২৫৭ জনকে নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে পিএসসির সুপারিশ গ্রহণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে কি না, তা সুস্পষ্ট নয়।
প্রকল্প থেকে আসা প্রকৌশলীদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা সমীচীন হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মতামত দেয়। তবে এ মতামত আমলে না নিয়েই খসড়া জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির বঞ্চিত প্রকৌশলীরা।
এ বিষয়ে এলজিইডির জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিধিবিধান মেনে খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে জানাবেন। তাঁদের আপত্তি যৌক্তিক হলে আমলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রকল্প থেকে নিয়মিত হওয়া দুজন প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। তাঁদের কোনো সংগঠন না থাকায় আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।