ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের উপায় খুঁজছে সরকার

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

পণ্য আমদানিতে ডলারের সংকট কাটিয়ে উঠতে ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের উপায় খুঁজছে সরকার। ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপি, চীনা ইউয়ান এবং রাশিয়ার রুবল ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করলে কী ধরনের সুবিধা–অসুবিধা হতে পারে, তা জানতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের (সালমান এফ রহমান) উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বৈঠকে অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবেরাও উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

আজকের বৈঠকে মূলত ওষুধশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়েছে। স্বয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটিড, বেক্সিমকো, একমি, এসিআই, রেনাটা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ওষুধ তৈরিতে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করে থাকে। মূলত, ভারত, চীন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয়। ডলার–সংকট কাটিয়ে উঠতে ভারত ও চীনের মুদ্রা ব্যবহার করলে কী ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে, এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করার সুবিধা–অসুবিধার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওষুধশিল্পের পাশাপাশি অন্য খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ধাপে ধাপে বৈঠকে বসবে সরকার। এরপর যারা খাদ্যপণ্য আমদানি করে, তাদের মতামত নেওয়া হবে। এটি শুধু বর্তমান ডলার–সংকটের কারণেই নয়। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের বৈশ্বিক কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন যাতে বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার করা যায়, সে জন্য এখন থেকে প্রস্তুত নেওয়া হচ্ছে।

চীন ও ভারতের মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়ে বেশি আলোচনা হওয়ার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ মোট আমদানির ৪০ শতাংশের বেশি করে ভারত ও চীন থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে—২৬ শতাংশের বেশি। আর ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয় মোট আমদানির ১৫ শতাংশের মতো। সে জন্য এ দুটি দেশের মুদ্রা ব্যবহারের উপায় খোঁজা হচ্ছে।

তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৮৭ কোটি ডলার। একক পণ্য হিসেবে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা আমদানিতে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে তুলা আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪৪০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় কারখানায় রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা। এ পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২৭২ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ফার্নেস তেল আমদানিতে ২২০ কোটি ডলার এবং গম আমদানিতে ২১৩ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে গত অর্থবছর।

ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। বিকল্প মুদ্রার ব্যবহারের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই দেশে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের সুবিধা–অসুবিধা যাচাই করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারে সুবিধা যেমন আছে, তেমনি জটিলতাও আছে। কেউ কেউ বলছেন, ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করলে কিছুটা সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ।

যে কারণে ডলার প্রয়োজন

কোভিডের ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এ কারণে দেশের আমদানি খরচ বেড়ে যায়। আবার গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ও কমেছে। তাই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা হয়। খোলাবাজারে দর ১১৫ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বাড়তি আমদানি খরচ মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে দেখা দিয়েছে বড় ঘাটতি।