সদ্য বিদায়ী বছরে দেশে ৫ হাজার ৭০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৫ হাজার ৭৬০ জন। আগের বছরের তুলনায় বিদায়ী বছরে সড়কপথে ২ হাজার ৪১৫ জনের মৃত্যু বেশি হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
নিসচা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে থাকে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, একই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৯ হাজার ৯৫১ জন। মৃত্যুর সংখ্যার হিসাবে তারতম্য হলেও সব সংগঠনই বলছে, গত বছর সড়কে মৃত্যু বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিসচা জানিয়েছে, সড়কপথে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মোটরসাইকেল, যার সংখ্যা ১ হাজার ৩৪০টি। দ্বিতীয় স্থানে নছিমন, করিমন, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান রিকশা এবং তৃতীয় স্থানে ট্রাক। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে কার বা জিপ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রশাসনের সামনে কিশোরেরা তা চালায়। অনেক সময় লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলও চালায় তারা। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নিয়মকানুন না মেনে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেও মৃত্যু বাড়ে। একই সঙ্গে তাঁদের দেখাদেখি অন্যরাও উৎসাহিত হয়।
নিসচার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে সড়কে বাসচাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এ সময় ৩ হাজার ১৪৬টি বাসচাপার ঘটনা ঘটে। এতে ৩ হাজার ৫৩৮ জনের মৃত্যু এবং ২ হাজার ১৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪২০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে, যা দুর্ঘটনায় মোট প্রাণহানির ২০ শতাংশ। গাড়িচাপা, পেছন থেকে ধাক্কাসহ নানাভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন পথচারীরা। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা, রাস্তা চলাচল ও পারাপারে মুঠোফোন ব্যবহার, পদচারী–সেতু ব্যবহার না করায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে গত বছর মার্চে ৬৭৫ জনের এবং কম হয়েছে অক্টোবরে ৩৭৪ জনের। নিসচা বলেছে, বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, যার সংখ্যা ১ হাজার ৮২৭। সবচেয়ে কম মারা গেছেন সিলেট বিভাগে—৩৩৭ জন। আর জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ৪৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে ঝালকাঠি জেলায় ২৪ জনের।
সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের দেওয়া ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানো, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়ক-মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ না করা, চালকদের মাদকে আসক্তি, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে বৈধ ও অবৈধ গাড়ির বৃদ্ধি, মহাসড়কের নির্মাণত্রুটি, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। এ সময় এসব সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করা হয়। দেশে সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানপথে সব মিলিয়ে বিদায়ী বছর সাত হাজারের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে নিসচা। এতে ৮ হাজার ১০৪ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৭৮৩ জন।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি, যেন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। সড়কে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি যেন ন্যায়বিচার পান। সে জন্য পুরোনো আইনকে যুগোপযোগী করে একটি নতুন আইন চেয়েছিলাম। আইনটি ২০১৮ সালে সংসদে পাস হওয়ার পর এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বলব, যে আইনটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা যেন অচিরেই বাস্তবায়ন করা হয়।’