প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিন উপলক্ষে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিন উপলক্ষে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর

নির্বাচন বানচাল করে কাউকে লাভবান হতে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী

মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা ও আগামী ৭ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলার মাটিতে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নির্বাচন বানচাল করে কাউকে লাভবান হতে দেওয়া হবে না।’

আজ রোববার সকালে গণভবনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন-২০২৩ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো জঘন্য হামলা চালানোর নির্দেশ দেয় এবং যারা সেই নির্দেশ পালন করে, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। যাত্রীবাহী ট্রেনে বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসংযোগের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক মা তাঁর ছোট সন্তানকে বাঁচাতে বুকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন, সেভাবেই পুড়ে মারা গেছেন। আমরা এ ধরনের দৃশ্য দেখতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, বাস এবং ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দিয়ে লাভটা কী হবে? মানুষ হত্যা করে, রেললাইনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করেছে? এটা কী ধরনের রাজনীতি, আমি জানি না।’
মানুষকে পুড়িয়ে মারা মহাপাপ ও অন্যায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। কোনো ধর্মগুরু এটা মেনে নিতে পারেন না। মানবতার জন্য যিশুখ্রিষ্ট তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবতা ও মানব জাতির কল্যাণই সব ধর্মের মূলকথা। আমরা সেই বিশ্বাস থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। এ দেশের মাটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশানির্বিশেষে সবার। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। আমি সবার কল্যাণ ও উন্নয়ন কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে গণভবনে কেক কাটেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ায় সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মনির্বিশেষে সবাই রক্ত দিয়েছেন ও দেশের স্বাধীনতার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে রূপান্তর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন।

বড়দিন উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে এ সময় শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জুয়েল আরং, আইনজীবী গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান লীগের সভাপতি ড্যানিয়েল নির্মল ডি. কস্তা ও বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২৩৫ মিলিয়ন ডলার দেবে অস্ট্রেলিয়া

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন ডলার দেবে। ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ী হাইকমিশনার জেরেমি বুয়ার রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এ প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনার কোভিড-১৯ মহামারি সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন ও দুই দেশের মধ্যে জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।