এমসিসির প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রের ২০ সূচকের ১৭টিতেই বিপজ্জনক অবস্থানে বাংলাদেশ

আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কার্যকারিতা, তথ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তার মতো সূচকে ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের ব্যয়, কর্মসংস্থান এবং শিশুস্বাস্থ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান তথৈবচ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের (এমসিসি) ২০টি সূচকের ১৭টিতেই বিপজ্জনক অবস্থানে (রেড জোন) রয়েছে বাংলাদেশ।

এমসিসি বলছে, ২০২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনের ২০টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭টিতেই বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব নীতি ও টিকা দেওয়ার হার—শুধু এ তিন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক, সবুজ জোনে।

প্রতি বছর ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন ক্যান্ডিডেট কান্ট্রি রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে এমসিসি। দারিদ্র্য বিমোচনে অর্থসহায়তা দেওয়ার জন্য এ সূচক তৈরি করে থাকে সংস্থাটি। গত মঙ্গলবার ২০২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ২০টি সূচকে ৮০টি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন কংগ্রেসের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় এমসিসি।

এমসিসির এবারের প্রতিবেদনে ‘ন্যায়সংগত শাসন’ ক্যাটাগরির ছয়টি সূচকের সবগুলোতে ‘রেড জোনে’ বাংলাদেশ। এসব সূচক হলো—রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কার্যকারিতা, আইনের শাসন এবং তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতা। তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতা সূচকে এক বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ৩ পয়েন্ট খুইয়েছে বাংলাদেশ।

আরেকটি ক্যাটাগরি রয়েছে ‘জনগণের জন্য বিনিয়োগ’। এই ক্যাটাগরির ছয়টি সূচকের মধ্যে শুধু টিকাদানের হারে নিরাপদ অবস্থানে (সবুজ জোন) রয়েছে বাংলাদেশ। বাকি পাঁচটি সূচক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা, মেয়েদের নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তের হার এবং শিশুস্বাস্থ্যে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে।

‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে সর্বোচ্চ আটটি সূচক। এগুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে লিঙ্গভিত্তিক অবদান, ভূমির অধিকার ও প্রবেশগম্যতা, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, আর্থিক নীতি নিয়ন্ত্রণের মান, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও বাণিজ্য নীতি—এ ছয়টি সূচকে বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শুধু মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক অর্থাৎ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

এর আগে ২০২৩ অর্থবছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ২০টির মধ্যে ১৭টি সূচকে বিপজ্জনক অবস্থানে ছিল। তার আগে অবস্থান কিছুটা ভালো ছিল। ২০২২ অর্থবছরে ২০টির মধ্যে ১৬টিতে, ২০২১ সালে ১৩টিতে, ২০২০ সালে ১২টিতে, ২০১৯ সালে ১১টিতে, ২০১৮ সালে ৭টিতে, ২০১৭ সালে ১০টিতে এবং ২০১৬ ও ২০১৫ সালে ৯টি করে সূচকে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থানে ছিল।

২০২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনের জন্য মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে ৮০টি দেশ বেছে নিয়েছে এমসিসি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এসব দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ১৪৬ ডলার থেকে ৪ হাজার ৪৬৫ ডলারের মধ্যে। সেই সঙ্গে এসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে দেশটির আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হতে হয়।

এমসিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির তহবিল থেকে সহায়তা পেতে যেকোনো দেশকে প্রতিবেদনের প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকে একটি সূচকসহ অন্তত ১০টি সূচকে গ্রিন জোনে থাকতে হয়।