বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে আরও কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করতে চায় সৌদি আরব।
প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। তবে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয় ২০১৯ সালে। এতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ, সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষাশিল্প সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো উপাদান রয়েছে।
রিয়াদে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চুক্তিটি সইয়ের এক দিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই সংসদ সদস্য এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রতিরক্ষাবিষয়ক ওই এমওইউ সইয়ের মধ্য দিয়ে সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেটি সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, সে প্রশ্নও তাঁরা তোলেন।
ওই এমওইউ নিয়ে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের আপত্তি অবশ্য অন্য জায়গায়। কারণ, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের ‘অন্যায় যুদ্ধে’ বাংলাদেশের সমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ।
‘সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কারণ, ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বে যে অভিযান চলছে, তাতে জাতিসংঘের স্বীকৃতি নেই।আ ন ম মুনীরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.)
এ অবস্থায় বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে সৌদি আরব প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান।
কিং সালমান মানবিক সহায়তা এবং ত্রাণকেন্দ্রের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সৌদি আরবের দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ এ তথ্য জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ঈসা বিন ইউসুফ এমন একটা সময়ে এ মন্তব্য করলেন, যখন তাঁর দেশের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনের (আইএমসিটিসি) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বিন সায়েদ আল-মোঘদি বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। গত ২৬ ও ২৭ জুলাই তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। ৪১টি মুসলিম দেশের এ জোটের প্রধান নির্বাহীর ঢাকা সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল আইএমসিটিসিতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আইএমসিটিসি নামে এ জোট গঠনের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ শুরুতেই জোটে যোগ দিলেও এখনো রিয়াদে সামরিক জোটটির সচিবালয়ে কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। সেখানে বাংলাদেশের চারজন কর্মকর্তার কাজ করার কথা। তাঁদের মধে৵ দুজন সামরিক কর্মকর্তা, একজন কূটনীতিক ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরু হয়। এখনো দেশটিতে শান্তি ফেরেনি। ওই অভিযান শুরুর ৯ মাসের মাথায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের লক্ষ্যে আইএমসিটিসি গড়ে তোলে সৌদি আরব।
যুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি নেতৃত্বাধীন হামলায় ইয়েমেনে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক বিশ্লেষণে ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বাধীন বিমান হামলাকে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
দেশের নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কারণ, ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বে যে অভিযান চলছে, তাতে জাতিসংঘের স্বীকৃতি নেই।
ইয়েমেনে অভিযান নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যাতে কোনোভাবেই জটিলতা বা বিতর্কের মুখে না পড়ি, সেটি বিবেচনা করতে হবে।’