চট্টগ্রামে ফেরদৌসী কাদরী

‘নারীদের সাহসী হতে হবে, বলতে হবে, আমি পারব’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উদ্যোগে আয়োজিত প্রকৃতিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল বক্তা ছিলেন বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী
ছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেছেন, নারী শিক্ষার্থীদের সাহসী হতে হবে। গবেষক হিসেবে তৈরি হতে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। পরিবারকে বলতে হবে, আমি পারব। যেকোনো জায়গায় গিয়ে গবেষণা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তবে তরুণদের গবেষক হিসেবে তৈরি করার দায়িত্ব বড়দেরও নিতে হবে। তাঁদের জন্য দেশে জায়গা তৈরি করতে হবে।

আজ শুক্রবার এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উদ্যোগে আয়োজিত প্রকৃতিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল বক্তার বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম নগরের হোটেল আগ্রাবাদে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। আগামীকাল শনিবার শেষ দিন।

প্রথম দিন ‘রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট—আ কেস স্টোরি ফর আ সায়েন্টিস্ট ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। তিনি কলেরা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ও টিকার কার্যক্রম নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় আমরা নানা কিছু শিখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা করোনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। কিন্তু করোনাকালে অন্য সব সংক্রামক ব্যাধির টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী জানান, করোনার আগে ঢাকার ৬টি থানার ১২ লাখ মানুষকে কলেরার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। একইভাবে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার এলাকায়ও। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ৩০ লাখ ডোজ কলেরার টিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচিও থেমে আছে। এসব কর্মসূচি পুরোদমে চালু করতে হবে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রুবানা হক, সম্মেলনের সভাপতি এ কে এম মনিরুজ্জামান মোল্লা, সম্পাদক সৃষ্টি সোম, ইউনিভার্সিটির কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বীনা খুরানা। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের অর্ধশতাধিক গবেষক গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন প্রদর্শন করেন। ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রুবানা হক বলেন, ‘আমাদের মানবিক হতে হবে। টেকসই বিশ্ব গড়তে মানবিকতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

পোস্টারে পোস্টারে গবেষণাকর্ম

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ের (ইউএসটিসি) একদল শিক্ষার্থী চট্টগ্রামে বায়োমেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার ফলাফল প্রদর্শন করা হয় পোস্টারের মাধ্যমে। এই পোস্টার অতিথিদের নজর কেড়ে নেয়। গবেষক দলের সদস্য মোহাম্মদ ইমরান বলেন, বায়োমেডিকেল বা হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রামের হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থা অনুসন্ধান করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়। দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালের বর্জ্যগুলো ঠিকভাবে নিষ্কাশন করা হচ্ছে না। বিভিন্ন উপায়ে বর্জ্যগুলো মুক্ত পরিবেশে ছড়িয়ে থাকছে। এ কারণে সংক্রামক রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা নিয়ে পোস্টারের মাধ্যমে গবেষণাকর্ম প্রদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং মা ও শিশু হাসপাতালের গবেষক দল। হাসপাতালের চিকিৎসক নাহিদ সুলতানা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন তাঁদের পোস্টারের বিষয়ে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকরী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী জীবাণুতে আক্রান্ত রোগীদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। দু-তিন দিন বয়সের নবজাতকের শরীরে ৩য় ও ৪র্থ প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করছে না। তাই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।