পর্যটনশিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে

বিশ্বজুড়ে পর্যটনশিল্প দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক খাতগুলোর একটি। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রতিবছর বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা এবং তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। জানা যাক, এ বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কতটা।

পর্যটনে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ

পর্যটন নিয়ে উচ্চশিক্ষা বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান পর্যটন ও আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রদান করছে। যদিও এখানে তত্ত্বীয় জ্ঞানদানই বেশি হয়ে থাকে, ব্যবহারিকে দক্ষ হতে হলে নিতে হয় প্রশিক্ষণ বা করতে হয় ইন্টার্নশিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন ও চাকরির সুযোগ দিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। পাশাপাশি এ খাতের উপযোগী উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে খোঁজ ও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ‘পর্যটন ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামের বিভাগ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রাম থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরও পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্ট বিভাগে রয়েছে বেশ কদর।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি: পর্যটনশিল্পের সময়োপযোগী সব কোর্স নিয়ে ‘পর্যটন ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামের বিভাগ রয়েছে। তাই দেশের নামীদামি হোটেল ও পর্যটন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্ন ও চাকরিও করছেন এ বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি): পর্যটন খাতবিষয়ক বিভাগের নাম ‘হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’। এ বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়া অনেকেই স্বপ্ন দেখেন পর্যটন খাতে ক্যারিয়ার গড়ার।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি: ‘পর্যটন ও হোটেল ব্যবস্থাপনা’র জন্য বিশেষ কোর্স রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবণতা রয়েছে পর্যটন খাতে নিজেদের বিকশিত করার।

এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটনবিষয়ক কোর্স চালু রয়েছে। এ বিষয়ে স্নাতক বা ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিতে চাইলে উচ্চমাধ্যমিক পাসকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পর্যটন খাতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করছে দেশের নামীদামি কিছু প্রতিষ্ঠান।

ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এনএইচটিটিআই): বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে হোটেল ব্যবস্থাপনা, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস, ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কোর্স–বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগ্রহীদের এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এমন দক্ষতা অর্জনের রয়েছে বেশ সুযোগ।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড: পর্যটন পরিচালনায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা মানুষের মধ্যে প্রদান করা হয়।

বেসরকারি সংস্থা: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ‘ইন্টারন্যাশনাল হোটেল চেইন’ বা ‘হসপিটালিটি গ্রুপে’র অধীনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা হোটেলের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য।

চাকরি ও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

পর্যটনশিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সুযোগের অভাব নেই। পর্যটন বিষয়ে উচ্চশিক্ষাধারী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কোথায়, কীভাবে এসব সুযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় হোটেল হলিডে ইন ঢাকা সিটি সেন্টারের বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মানফুজা মাসুদ চৌধুরীর সঙ্গে।

মানফুজা মাসুদ চৌধুরী জানান, পর্যটন খাতবিষয়ক পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা হোটেল ম্যানেজমেন্টের ফ্রন্ট ডেস্ক, রুম সার্ভিস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। আর এ বিষয়ে দক্ষদের এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু ও গ্রাউন্ড স্টাফ পদে সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ট্যুর অপারেটর হিসেবে ট্যুর প্ল্যানিং ও প্যাকেজ বিক্রয় করতে পারেন। পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পেশায় কনফারেন্স ও করপোরেট ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারে উন্নতি করার সুযোগও রয়েছে। তবে যাঁরা হোটেল ম্যানেজমেন্টে চাকরি করতে চান, তাঁদের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কারণ, সব সময় গ্রাহকের চাহিদা মেটানো ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হয়। আর আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগও মেলে। এ জন্য দক্ষতা হিসেবে দরকার যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনা ও মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শিতা।

প্রতিষ্ঠানে চাকরি ছাড়া নিজ উদ্যোগে এ বিষয়ে শিক্ষা অর্জনকারীদের সুযোগ রয়েছে ক্যারিয়ার গড়ার। এ প্রসঙ্গে মানফুজা মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে নিজস্ব পর্যটন ব্যবসা শুরু করা যায়। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট গাইডের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে আয়ের সুযোগও রয়েছে। তবে এ কাজে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। পর্যটকদের সন্তুষ্ট করা এবং যাত্রাপথে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। এ ছাড়া দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে ভবিষ্যতে সম্ভাবনা রয়েছে নিজস্ব উদ্যোগে ট্যুরিস্ট গাইড কোম্পানি চালু করার।’

সর্বোপরি উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার দক্ষতা থাকলে পর্যটন খাত একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে পারে। শুধু আপনার আগ্রহের জায়গাটি চিহ্নিত করতে হবে এবং সেখানে কাজ শুরু করতে হবে।