দেড় মাস ধরে ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি। এই বাড়তি তাপমাত্রা লঘুচাপ ও মেঘ তৈরি করছে। তা আবার বৃষ্টি বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী দুই থেকে তিন দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গায়ও দুই দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী অবস্থায় আছে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উঠে পড়েছে। ফলে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন দিন এই বৃষ্টি চলতে পারে।
কক্সবাজার উপকূলে ভারী বৃষ্টির পেছনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাব রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াগি সপ্তাহখানেক আগে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়। তা আঘাত হানে ভিয়েতনাম, চীন ও মিয়ানমারে। তিন দেশে তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আবার সাগরে নামে। তারপর তা প্রচুর মেঘ নিয়ে লঘুচাপ আকারে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবেই দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের দূরবর্তী প্রভাব, শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু ও বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি হওয়া মেঘমালা মিলেমিশে আজ কক্সবাজারে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে।
ক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, গতকাল বেলা ৩টা থেকে আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
টানা ২০ ঘণ্টার এই ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের বেশির ভাগ এলাকা। সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেলকক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তাঁরা কোথাও বের হতে পারছেন না। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।
এদিকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির আশঙ্কায় দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর ও উপকূলীয় নদ-নদীগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বছরের এ সময়ে ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাপমাত্রা থাকার কথা ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেড় মাস ধরে তা থাকছে ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে সাগরে পাঁচটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দুটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় গত ২০ দিনে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা আঘাত হেনেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই দিন ধরে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। তবে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি নামতে শুরু করবে। আজ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১১৬টি পয়েন্টের মধ্যে ১৬টির পানি বেড়েছে, বাকিগুলোর কমেছে।