মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এর শুরু ব্যক্তি উদ্যোগে, জনসাধারণের দেওয়া অর্থ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এখনো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতনসহ বিভিন্ন খরচ বহন করতে হয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকেই। তাই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনায় জনসাধারণ ও প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল সংগ্রহ করছে। দ্বিতীয় দফায় চলছে এ কার্যক্রম।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে দ্বিতীয় দফায় তহবিল সংগ্রহের এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের তহবিলে ইতিমধ্যে ৩০ কোটি টাকা আছে। তাদের লক্ষ্য, ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ। এ অর্থের জন্য দ্বিতীয় দফা তহবিল সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। এই অর্থ থেকে যে লভ্যাংশ আসবে, তা দিয়ে জাদুঘর পরিচালনার খরচ বহন করা হবে।
জাদুঘর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফা তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সাল থেকে যাঁরা জাদুঘরে সহায়তা করেছেন, তাঁদের স্মারক দেওয়া হয়। পাঁচটি বিভাগে ৪২ জনকে দেওয়া হয় এ স্মারক।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘জাদুঘরের সামনে একটি বাক্স রাখা ছিল। যার যা ইচ্ছা হতো তা দিতে পারত। আমি দেখেছি, একজন রিকশাওয়ালা তাঁর রিকশা থামিয়ে বাক্সে কিছু টাকা রাখলেন। এভাবেই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে উঠেছে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে স্বনির্ভর করতে যে চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করা হয়েছে, তা সবার সহযোগিতায় সফল হবে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, মানবিক সমাজ গড়তে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের বলেন, ‘তহবিল–সংকটে কখনো যেন দুর্বল হতে না হয়। এ–ও হতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সরকার তাদের অধীনে নিল। এটা হতে দেব না। আমরা যেন স্বাধীন থাকতে পারি, সে জন্য আমাদের স্বনির্ভর হওয়ার এ উদ্যোগ।’
যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছিল, তখন এই জাদুঘর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তহবিল গঠনে ১০ হাজার টাকায় প্রতীকী ইট বিক্রি, ২৫ হাজার টাকায় সাধারণ সদস্য, ১ লাখ টাকায় আজীবন সদস্য, ৫ লাখ টাকায় উদ্যোক্তা সদস্য, ১৫ লাখ টাকায় স্থাপনা সদস্য, ৫০ লাখ টাকায় পৃষ্ঠপোষক সদস্য এবং ১ কোটি বা তার বেশি টাকায় সম্মানীয় পৃষ্ঠপোষক সদস্য পদ দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তহবিলে যেকোনো পরিমাণ অর্থসহায়তাও গ্রহণ করছে।
তহবিলে অর্থ সহায়তা দেওয়ায় আজ যে ৪২ জনকে স্মারক প্রদান করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে স্থাপনা সদস্য হয়েছেন সারওয়াত সিরাজ; উদ্যোক্তা সদস্য হয়েছেন ইরেশ যাকের, আনোয়ারুল কাদীরসহ আটজন; আজীবন সদস্য হয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম, অজয় দাসগুপ্তসহ ২৭ জন; সাধারণ সদস্য হয়েছেন দীপঙ্কর চৌধুরী, সৈয়দ শফিকুল হকসহ পাঁচজন এবং প্রতীকী ইট কিনেছেন সুশীল কুমার শীল, মালেকা বেগমসহ ৪১ জন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা সদস্য সারওয়াত সিরাজ, এশিয়াটিক ৩৬০–এর মানসম্পদ বিভাগের প্রধান ফারাহ্ তানজীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম।