তৈমুর আলম খন্দকার (বাঁয়ে) ও সমশের মবিন চৌধুরী
তৈমুর আলম খন্দকার (বাঁয়ে) ও সমশের মবিন চৌধুরী

‘জাতীয় বেইমান’ প্রসঙ্গে যা বললেন শমসের ও তৈমুর

নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে তৃণমূল বিএনপির কিছু প্রার্থী বিরূপ মন্তব্য করছেন বলে মনে করেন দলটির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী।

 অন্যদিকে দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার প্রশ্ন তুলেছেন, দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠ ছেড়ে ঢাকায় কী করছেন?

 এবারের নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির কিছু প্রার্থী গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভায় শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার ‘জাতীয় বেইমান’ হিসেবে আখ্যা দেন।

‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দলটির প্রার্থীদের কারও কারও অভিযোগ, দলের দুই শীর্ষ নেতা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। দলের তহবিল তছরুপ করেছেন। প্রার্থীরা আরও কিছু অভিযোগ করেন।

 তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থীর সঙ্গে ‘মতবিনিময় ও আলোচনা সভা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আসনে দলের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, দলের ১৩০ জন প্রার্থী এখন তাঁদের সঙ্গে আছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা-১৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী খন্দকার এমদাদুল হক ওরফে সেলিম।

 বিষয়টি নিয়ে আজ শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে শমসের মুবিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভাটি কয়েকজন ব্যক্তি করেছেন, তৃণমূল বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না। তাঁরা তৃণমূল বিএনপির ব্যানার টানিয়েছেন অবৈধভাবে। মহাসচিব কিংবা আমার অনুমতি ছাড়াই তাঁরা ব্যানার টানিয়েছেন।’

 আয়োজকেরা তো তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী—এ বিষয়ে শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘তাঁরা তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আছেন, মনোনয়নপত্র যখন তাঁরা নেন, তখন বড় বড় কথা বলে নিয়েছেন। এখন পারছেন না, তাই এমন করে তাঁরা বলছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে তাঁরা আমাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাওয়া দুটি দলের একটি বিএনএম (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন), অন্যটি তৃণমূল বিএনপি। আলোচনা আছে, এ দুই দলের মাধ্যমে বিএনপির নেতাদের অনেককে নির্বাচনে আনার চেষ্টা ছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

 প্রয়াত মন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপি আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পেয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর মেয়ে অন্তরা হুদা। তাঁকে সরিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি হন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী, যিনি আমলা থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন। তৃণমূলে আসার আগে তিনি ছিলেন বিকল্পধারায়।

 মহাসচিব হন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা (২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় বহিষ্কৃত) তৈমুর আলম খন্দকার।

 তৃণমূল বিএনপি নেতারা নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া এবং সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছিলেন। দলটি ২৯০টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, দলটির প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ১৫১ জন। তাঁদের ১৩৩ জনের মতো প্রার্থী ভোটে আছেন। তবে বেশির ভাগ গণসংযোগ ও প্রচারে কার্যত নেই।

দলের চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন।

 অবশ্য আলোচনা আছে যে শমসের মুবিনকে জিতিয়ে আনতে আওয়ামী লীগের চেষ্টা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ শমসেরের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে।

 তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তৈমুর নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন।

 দলের প্রার্থীদের ‘কয়েকজনের’ সভা করার বিষয়টিকে নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের কাঙ্ক্ষিত ফান্ড (তহবিল) দিতে পারি নাই, এটা ধ্রুব সত্য। নির্বাচন তো বুঝি, যৎসামান্য খরচও দিতে পারি নাই। তবে প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয় নিজেরা বহন করবে, সেটা লিখিত দিয়েছিল।’

 তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা দুই দফায় দল থেকে কিছু খরচ দিয়েছি। তবে যাদের মাঠে পাওয়া যায়নি, তাদের দ্বিতীয় দফায় কোনা খরচ দেওয়া হয়নি।’

 দলের তহবিল ‘তছরুপের’ অভিযোগ নিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘তহবিল তো আগে কেউ দিতে হবে, তছরুপ তো পরে। সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনী ব্যয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আগের কিছু অর্থ, দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও সচ্ছল সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তায় নির্বাচনের খরচ কিছু জোগাড় করা হয়েছে।’

 আলোচনার জন্য দলের প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে এনে চার দিন ধরে বসিয়ে রাখার অভিযোগ নিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘যাঁরা দলের প্রার্থী, তাঁরা তো নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। দল নির্বাচনী খরচ পাঠালে তো তাঁদের এলাকাতেই পাঠিয়ে দেবে। নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে তাঁরা ঢাকায় কী করেন, সেটাই প্রশ্ন।’