হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন পুনর্বহালের রায় স্থগিত

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন ও সরকারি ছুটির বিধান বাতিলের প্রজ্ঞাপন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। পাশাপাশি হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত করেছেন আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে গতকাল রোববার আদেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ।

এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট ওই রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছর লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। লিভ টু আপিলটি গতকাল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

আদেশের বিষয়টি জানিয়ে আজ সোমবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে ১৫ আগস্ট শোক দিবস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ লিভ টু আপিল করে। আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আপিলের ওপর শুনানি হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুন হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ৮ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস পালন ও সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ৩ আগস্ট অপর এক প্রজ্ঞাপনে ১৫ আগস্ট ছুটি বাতিলসহ জাতীয় শোক দিবস বাতিল করে। এর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ২০০৭ সালে রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে শোক দিবস পালন ও ছুটি বাতিলের প্রজ্ঞাপন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে ১৫ আগস্ট শোক দিবস ও ছুটি হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে গত ১৩ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১৫ আগস্ট সাধারণ ছুটি বাতিলসংক্রান্ত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছুটি বাতিলের বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সরকার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হলো।

‘জয় বাংলা’ স্লোগানসংক্রান্ত রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

‘জয় বাংলা’ হবে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান—এমন ঘোষণাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদনের ওপর আগামী রোববার আপিল বিভাগে শুনানি হতে পারে।

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায় দেন। রায়ে ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে এবং জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্লোগানটি উচ্চারণের জন্য পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়। ২০১৭ সালে ওই রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মন্ত্রী পরিষদ সচিবসহ অন্যরা চলতি বছর লিভ টু আপিলটি করেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আজ সোমবারের কার্যতালিকায় লিভ টু আপিলটি ১৩২৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে তুলে ধরা হয়। লিভ টু আপিলটি আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে বলেছেন আদালত। আশা করি, সেদিন শুনানি হবে।’