প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্মদান

চট্টগ্রামে মাতৃমৃত্যুর ঘটনায় ওষুধের ত্রুটি মেলেনি

আগে ব্যবহৃত ওষুধ বন্ধ করার পর নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে অভিযোগ ওঠা হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রামে অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে মারা যাওয়া ১১ প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবহৃত ওষুধে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর এমন তথ্য জানান তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে আগে ব্যবহৃত ওষুধগুলো বন্ধ করার পর নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে অভিযোগ ওঠা হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পর ১১ প্রসূতি মারা যান। হাসপাতালগুলো হলো মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, চান্দগাঁওয়ের ইন্টারন্যাশানাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিটি করপোরেশনের মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল।

এ নিয়ে গত ২৯ মার্চ সারা দেশে ‘সন্তান জন্মে অস্ত্রোপচারে ১৬ মায়ের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় ২৮ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তারকে। এই কমিটিতে চমেকের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের রাখা হয়। পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিনকেও সদস্য রাখা হয়েছিল।

কমিটি সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি প্রসূতিদের মৃত্যুর কারণের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল অস্ত্রোপচার এবং পরবর্তী সময়ে ব্যবহৃত ওষুধে কোনো ত্রুটি ছিল কি না, তা পরীক্ষা করা। এ জন্য সিজারিয়ান অস্ত্রপচারের সময় ব্যবহৃত ওষুধগুলো ঢাকার ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক সাহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে আমরা তদন্ত করেছি। পরে আরেকজন মারা গেলেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এর মধ্যে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ত্রুটি ল্যাব পরীক্ষায় মেলেনি। ওষুধ প্রশাসন এই পরীক্ষাগুলো করে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করেছি। কাল (আজ) সবাই আবার বসব।’

তবে এসব মৃত্যুর কারণ কি অবহেলা নাকি অন্যকিছু, এমন প্রশ্নের জবাবে সাহেনা আক্তার বলেন, একেকজন রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ ছিল। কারও সংক্রমণ ছিল, কারও বা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের ইতিহাস ছিল। তবে যে হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ানে প্রসূতি মারা গেছেন, তারা বলছে ওষুধগুলোর ব্যবহার বন্ধ করার পর আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

ওষুধ প্রশাসন সূত্র জানায়, তারা চার ধরনের ওষুধ পরীক্ষার জন্য ঢাকার পরীক্ষাগারে পাঠায়। এর মধ্যে ছিল অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়ার ওষুধ, স্যালাইন বা ইনফিউশন, ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক। সম্প্রতি এই ওষুধগুলোর পরীক্ষার প্রতিবেদন চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়। তখন তা তদন্ত কমিটিকে জানানো হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যেসব ওষুধ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি, সেগুলোতে কোনো ধরনের ত্রুটি মেলেনি। এখন কী কারণে এমন মৃত্যুর ঘটনা পরপর হলো, তা কমিটির প্রধান এবং স্যাররা ভালো বলতে পারবেন।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পক্ষ ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, যেহেতু ওষুধগুলোর অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন, তাই তাদের দিয়ে এই পরীক্ষা করানো কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখা দরকার। এ জন্য একটা নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে ওষুধগুলোর মান পরীক্ষার দরকার রয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সুমাইয়া তারিন (১৯) নামের অপর এক প্রসূতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই প্রসূতির অস্ত্রোপচারও হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার পর চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট ১২ প্রসূতি মারা যান।