ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ৬ জুলাই।
প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ রাখার চিঠি দেয় ২ ডিসেম্বর।
চট্টগ্রাম নগরে সড়কবাতি স্থাপনে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পাঁচ মাস পর প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে ভারত ঋণ হিসেবে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার অনুদান হিসেবে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার অর্থায়ন করত। শুরুতে মেয়াদ ধরা হয়েছিল দেড় বছর।
‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার সড়কবাতি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়টি ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৬ জুলাই ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)-৩-এর আওতায় বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল।
ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতা, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছিল সিটি করপোরেশন। শেষ পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদনের পাঁচ বছর পর গত ৬ জুলাই প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের পক্ষে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং ভারতীয় ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (স্মার্ট সিটিজ) নিরাজ কুমার চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি সইয়ের এক মাসের মাথায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের কার্যক্রম গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ইআরডি, আইএমইডি (বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) ও পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতে ব্যয় বৃদ্ধি না করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর ঋণ চুক্তি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলতি বছরের ৬ জুলাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটির কার্যক্রম গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে জানার জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভারতীয় ঋণের টাকায় সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সড়কবাতি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন প্রকল্পটি সিটি করপোরেশনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় প্রকল্প ছিল। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকেও কোনো টাকা খরচ করতে হতো না। সিটি করপোরেশনের যে আর্থিক অবস্থা, তাতে নিজস্ব টাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য নেই।
করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ৪৬৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় শহরের ৪১ ওয়ার্ডে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বক্স বসানো হবে। পাঁচ মিটারের বেশি প্রশস্ত সড়কগুলোতে এসব বাতি লাগানো হবে। এ ছাড়া হাইড্রোলিক বিম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। এটি সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে আলোকায়নের জন্য গৃহীত সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার প্রকল্প বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন এই প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে, তা জানা নেই। আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে ছিলাম। এটি খুব দরকার ছিল। আর এখানে সিটি করপোরেশনের বিনিয়োগ ছিল না। অনুদান হিসেবে পাচ্ছিলাম। এটি ভালো প্রকল্প ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম আলোকিত হতো। তাই প্রকল্পটি রাখা যায় কি না, এ জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করার চিন্তাভাবনা করছি।’