এখন নিজের বিষয়ে সবাই অনেক সচেতন। জীবনযাপনে সুস্থ ও স্বস্তিতে থাকাকে প্রাধান্য দেন। যার একটা উদাহরণ আমরা দেখি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এসি ব্যবহারে।
দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এসি ব্যবহারকারীর সংখ্যা। উন্নত জীবনযাত্রার চাহিদা আর সাধ্যের মধ্যে দাম—দুটোই এর পেছনে বড় কারণ। বাসায় একাধিক এসিও ব্যবহার করেন অনেকেই। তাই গ্রাহকদের চাহিদা আর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের এসি।
বর্তমানে বাজারে কী কী ধরনের এসি পাওয়া যায়, কোন এসির কার্যক্রম কেমন, তা নিয়ে বলেছেন ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহাক হোসাইন।
এসি কিনতে যাওয়ার আগে ও পরে সঠিক ব্যবহারের জন্য জানা দরকার এসির প্রকারভেদ সম্পর্কে। বাজারে দুই ধরনের এসি পাওয়া যায়—মোনোব্লক আর স্প্লিট। মোনোব্লক এসিতে ইউনিটটি হয় এক ব্লকের। মোনোব্লকের অন্তর্ভুক্ত হলো উইন্ডো এসি ও পোর্টেবল এসি। আর স্প্লিট সিস্টেমস এসির ইউনিট হয় দুই ব্লকবিশিষ্ট। এর ভেতরের অংশটি শীতল বাতাসের উৎস আর বাইরের অংশটির কাজ হলো বাতাস ঠান্ডা ও রিসাইকেল করা।
বাংলাদেশের বাজারে যে চার ধরনের এসি বেশি বিক্রি হয়, সেগুলো হলো—
স্প্লিট এসি আসার আগে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অ্যাপার্টমেন্ট, বাসাবাড়ি ও অফিসেও এ ধরনের এসি ব্যবহার করা হতো। মধ্যপ্রাচ্যের ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এখনো উইন্ডো এসি ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। সাধারণ উইন্ডো এসি থেকে শুধু শীতল বাতাসই পাওয়া যায়। কিন্তু যখন এটার দাম খুব বেশি হয়, তখন উইন্ডো এসিতে গরম বাতাস বের হয়ে যাওয়া মোড ও রিমোট কন্ট্রোলও পাওয়া যায়। অন্যান্য এসির তুলনায় এই এসিতে বেশি বিদ্যুৎ–শক্তি খরচ হয়। এর সঙ্গে আছে জানালায় বা দেয়ালে ইনস্টল করার সময় আলাদা মাউন্টিং বা প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা।
পোর্টেবল এয়ারকন্ডিশনার লাগানোর জন্য আলাদা কোনো মাউন্টিং বা কাঠামোর প্রয়োজন হয় না। এর সঙ্গে একধরনের ফ্লেক্সিবল এক্সস্ট পাইপ থাকে। এই পাইপ দিয়ে জানালা বা দেয়ালে ছিদ্র করে ঘরের বাইরের দিকে নিতে হয়; কারণ চালু অবস্থায় এই এসিগুলো থেকে গরম ধোঁয়া বের হয়। ব্যবহারের দিক থেকে পোর্টেবল এসির সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে।
এর কমপ্রেসরটি আলাদা ইউনিটে থাকে না, এটি এসির ভেতরেই থাকে। ফলে এসি চালালে বিকট শব্দ হয়। আর কমপ্রেসরের সাইজ ছোট বলে কার্যক্ষমতারও সীমাবদ্ধতা আছে। এই এসির সুবিধা হলো, এগুলো ইনস্টল করতে কোনো অতিরিক্ত জিনিসের প্রয়োজন হয় না। এটার দামও হাতের নাগালে। তা ছাড়া বেশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় এই এসিগুলো অনেকেরই পছন্দের। সেই সঙ্গে আছে ইচ্ছেমতো স্থান পরিবর্তনের বিষয়টিও।
বাড়িতে যদি খুব বেশি পরিমাণ জায়গা থাকে বা বাণিজ্যিক জায়গায় ব্যবহারের জন্য সিলিং ক্যাসেট বা সিলিং সাসপেন্ডেড এসি উপযুক্ত। সিলিংয়ে লাগানো বা ঝুলে থাকা এ ধরনের এসি সাধারণত ভবনের ভেতর দিয়ে আসা এয়ার পাইপে সংযুক্ত থাকে। নান্দনিক সৌন্দর্য ও কার্যক্ষমতা দুটোই পাওয়া যায় এই এসিগুলোতে। এগুলো দেখতে আধুনিক আর জানালা বা মেঝে ভেদ করে ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না। এসিগুলো উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন, তাই একটি সিলিং সাসপেন্ডেড এসি ৩ থেকে ৪টি ওয়াল মাউন্টেড ইউনিটের সমান কাজ করতে পারে।
স্প্লিট এয়ারকন্ডিশনারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যবহৃত ওয়াল মাউন্টেড এসি সবচেয়ে জনপ্রিয়। স্টাইল, কার্যক্ষমতা ও কার্যকারিতায়ও এই এসির বিভিন্ন রকমের মডেল বাজারে পাওয়া যায়। তবে এর ইনস্টলেশনের ধরন হলো ইঞ্জিনিয়ার ফিট, অর্থাৎ চটজলদি নিজের মতো লাগিয়ে নেওয়ার সুবিধা এতে নেই। সাধারণত ঘরের উঁচু স্থানে ওয়াল মাউন্টেড এসি লাগানো হয়। এই এসিতে হিট পাম্প, টাইমার, রিমোট কন্ট্রোল, এয়ার পিউরিফিকেশনের মতো বেশ কিছু অপারেটিং মোড ও ফিচার রয়েছে।