আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন। আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে
আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন। আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে

মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ে: বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম

মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে বলে মনে করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় আজ সোমবার তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সদস্যদের জন্য ওই কর্মশালার আয়োজন করে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

বাংলায় রায় ও আদেশের চর্চা ও প্রবণতা নিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের দুটি দিক টেনে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘আপনারা যেকোনো নিউজকে ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’

প্রসঙ্গ ক্রমে উদাহরণ টেনে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে নিউজগুলো হয়। আমি সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব, মিডিয়ার ভূমিকার কারণেও কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সকাল আটটায় কোনো চ্যানেলে যদি বলে আজ খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সংকট; সকাল আটটায় যদি এই নিউজ করে; সকাল ১০টায় দেখবেন যে কারওয়ানবাজারে ৩০ ভাগ দাম বেড়ে যায়। ধরেন, বিকেলবেলায় শ্যামবাজারে দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গেল—একটা হাহাকার শুরু হয়ে যায়।…৮–১০টা টেলিভিশন যদি সারা দিন প্রচার করে ছোলার সংকট, পেঁয়াজের সংকট, রোজা আসছে, সয়াবিন তেল নেই। মজুত করা শুরু হয়ে যায়। মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়ে। যেখানে দুই কেজি কিনলেই হয়, সেখানে সে ১০ কেজি কিনতে চায়। চাহিদা বেড়ে যায়। এই যে নিউজগুলো হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে, এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে এখানে কিন্তু মিডিয়া পজিটিভ রোল–প্লে করে না। এখানে যদি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, বেশি কিনবেন না, কম কিনবেন, চাহিদা আছে, পর্যাপ্ত আছে।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন. ‘বিচার অঙ্গন, আইন অঙ্গন ও বিচারক সম্পর্কে যেকোনো নিউজ আপনারা করতে পারেন। সেটি কিন্তু পজিটিভ আকারেও উপস্থাপন করা যায়, যাতে মানুষের মনে কোনো নেতিবাচক ধারণা না হয়। বিচারকের আচার, আচরণ, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নিউজ করতে পারবেন না—এসব কথা ঠিক না। কিন্তু সেটি পরিপূর্ণভাবে শতভাগ সত্য হতে হবে। বিচারক নিয়ে যখন নিউজ করবেন, তখন বিচারকের ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, বিচারক প্রেস কনফারেন্স করে ডেকে আপনাদের বলতে পারবে না। সুতরাং এসব নিউজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে নিউজটি শতভাগ সত্য হয়।’

শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, শিশু আইন ও হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে, শিশুদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এদের পরিচয় যাতে প্রকাশ না হয়, ছবি যাতে না আসে। তিনি বলেন, ‘কিশোর গ্যাং গ্রেপ্তার বা ধরায় আইনি বাধা নেই। কিন্তু এদের ছবি দেওয়া, পরিচয় প্রকাশ করা—এটি কিন্তু আইনে বারিত আছে। এখন আপনাকে (গণমাধ্যমকর্মী) ডেকে ব্রিফ করল, ব্রিফ করলেই কি আপনি সেই ছবি প্রকাশ করে দেবেন? নাম প্রকাশ করে দেবেন? সেখানেই কিন্তু আপনাকে আইনটা মেনে সংবাদ পরিবেশনও করবেন, ছবি যাতে প্রকাশিত না হয়।’

ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান।