তিস্তার পানিপ্রবাহের তথ্য প্রকাশ করা জরুরি

১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১১ সালেও ভারত পানি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মমতা সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর তা আর হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ ছাপা হলো প্রথম কিস্তি

লালমনিরহাটে তিস্তার বুকে জেগেছে চর

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আবার নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চলিত মাসের গোড়ার দিকে ভারতের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাষাবাদের জন্য জমিতে সেচের পানি পৌঁছাতে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা নদীতে দুটি খাল খনন করা হবে। পরে দ্বিতীয় আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে তিস্তায় পানির পরিমাণ আরও কমবে। এ কারণে ধরে নেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশও কম পানি পাবে।

আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিল।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অস্বস্তি কখনো কমেছে, আবার কখনো বেড়েছে। সম্প্রতি ওই ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর অস্বস্তি আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। ঢাকা এখন দিল্লির পক্ষ থেকে উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।

‘পানি সম্পর্কে তথ্য সাধারণ মানুষের জানা উচিত বলে আমি মনে করি। এটা করা না হলে ব্যাপক ভুল ধারণা তৈরি হয়। তথ্য-উপাত্তের স্বচ্ছতা আন্তসীমান্ত পানি সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যার অভাবে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।
উত্তম কুমার সিনহা ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাহায্যপ্রাপ্ত স্বশাসিত সংস্থা মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো

বাংলাদেশ ও ভারতে এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমন একটা সময়ে তিস্তা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হওয়ার কি কোনো আশা আছে? ভারতের একাধিক নদীবিশেষজ্ঞ ও তিস্তা নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল। এঁদের প্রত্যেকেই মোটামুটি একমত—তিস্তা নিয়ে যা খবর আসছে, তা অসংলগ্ন ও বিচ্ছিন্ন।

গণমাধ্যমে এসব বিচ্ছিন্ন তথ্য ও মতামত পরিবেশনে বিভ্রান্তি বাড়ে। দীর্ঘ মেয়াদে তিস্তা সমস্যার সমাধান ও এ নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তি দূর করতে তথ্য ‘ক্লাসিফায়েড’ বা গোপন রাখার প্রশ্ন নেই। সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে প্রকাশ্যে তথ্যভিত্তিক বিতর্ক প্রয়োজন। কারণ, ১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরুর পর প্রায় ৪৯ বছর চলে গেছে, কিন্তু সরকারি পর্যায়ে সমস্যার সমাধান হয়নি।

তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ জরুরি

তথ্য প্রকাশ্যে আনা ও আদান-প্রদানের বিষয়ে ভারত সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত একটি সংস্থার সিনিয়র ফেলো উত্তম কুমার সিনহা বলেন, পানিসংক্রান্ত তথ্য জনগণকে জানানো প্রয়োজন।

উত্তম কুমার সিনহা ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাহায্যপ্রাপ্ত স্বশাসিত সংস্থা মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো এবং ভারতের নেতৃত্বে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের জন্য গঠিত ‘থিঙ্ক টোয়েন্টি ইন্ডিয়া’র (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) যুগ্ম সভাপতি। সিনহা নদী ও নদীকেন্দ্রিক কূটনীতিতে বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা।

সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানি সম্পর্কে তথ্য সাধারণ মানুষের জানা উচিত বলে আমি মনে করি। এটা করা না হলে ব্যাপক ভুল ধারণা তৈরি হয়। তথ্য-উপাত্তের স্বচ্ছতা আন্তসীমান্ত পানি সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যার অভাবে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। ভারতের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতি ক্রমে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ‘হাইড্রো-ডিপ্লোমেসি’কে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। এ জন্য ‘হাইড্রোক্রেসি’র (পানিবিষয়ক আমলাতন্ত্র) তথ্য গোপন রাখার মানসিকতা বদলাতে হবে। সিনহা বলেন, আইনগতভাবে বলা যায়, অস্বচ্ছতা নিরপেক্ষতার বা ন্যায্যতার মৌলিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।

অন্য দুই বিশেষজ্ঞের বিশেষ বক্তব্যও মোটামুটি প্রায় একই। এঁদের একজন পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী হিসেবে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ভারত-বাংলাদেশ পানিবিষয়ক বিভিন্ন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। ২০০৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত শরিক দল রেভল্যুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টির (আরএসপি) নেতা সুভাষ নস্কর বিভিন্ন সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তাসংক্রান্ত বৈঠকে ছিলেন। দপ্তরের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা তিস্তার যাবতীয় ‘তথ্য-উপাত্ত’ সে সময় তাঁর কাছে ব্যাখ্যা করতেন।

আরেক বিশেষজ্ঞ সুবীর সরকার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল এবং ফলিত (অ্যাপ্লাইড) ভূগোলের অধ্যাপক ছিলেন। দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন তিস্তা নিয়ে। দুজনেরই মত, প্রায় ৪৯ বছরে দুই দেশ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তিস্তার ‘তথ্য-উপাত্ত’ এবার প্রকাশ্যে আনা উচিত।

সুভাষ নস্কর প্রথম আলোকে বলেন, এখন মনে হয়, ‘পাবলিক ডিবেট’ দরকার আছে। এত দিন হয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এবার যাবতীয় তথ্য মানুষের সামনে রেখে কথাবার্তা বলা উচিত।

তবে কেন সেটা হচ্ছে না, তারও একটা ব্যাখ্যা দিলেন সাবেক সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমস্যা হলো, এটা অন্য কোনো দেশ হলে কথা ছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এতই গভীর যে সরাসরি কেউ কাউকে নেতিবাচক ও বাস্তব কথা বলতে পারছে না। সুতরাং ‘দেখছি’, ‘দেখব’, ‘দেখা যাক কিছু করা যায় কি না’—দুই পক্ষকেই এ জাতীয় কথা বলতে হচ্ছে।

বন্ধুত্বের কারণে কাটছাঁট কথা হচ্ছে না

সাবেক সেচমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা জাতীয় সমস্যা। সুতরাং একটা রাজ্যের পক্ষে সরাসরি কোনো কথা বলা সম্ভব নয়। ভারত সরকারকেও খানিকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই টালবাহানা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ভারত যদি বলে দেয় পানি নেই, তাই দেওয়া যাবে না—এমন কথা বললে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে তিক্ততার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্ব ও সম্পর্ক অনেক গভীরে। ফলে সহজে “না” বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’

বামফ্রন্ট সরকারের সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর আরও বলেন, ‘এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। তাতে সমস্যার সমাধান হবে না। বিষয়টা মমতার একার নয় যে তিনি ইচ্ছে করে পানি দিচ্ছেন না। পানি দিলে রাজ্যবাসীর ক্ষতি হবে। এটা কোনো রাজ্য সরকারই চাইবে না। তিস্তার যা অবস্থা, তাতে জল দেওয়ার পরিস্থিতি নেই। আমরাও ক্ষমতায় থাকতে এই কথাটি বলেছিলাম।’

মজার বিষয় হচ্ছে, সাবেক সেচমন্ত্রী যা-ই বলুন, বামপন্থীদের একাংশ এখনো বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে মমতা ইচ্ছা করে বাংলাদেশকে পানি দিচ্ছেন না।

২০০৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই প্রতিবেদককে দুবার সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সুভাষ নস্কর। এত খোলাখুলি না হলেও তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিস্তার পানি দেওয়া সম্ভব নয়।

নস্করের আগের সেচমন্ত্রী আরএসপির প্রয়াত নেতা গণেশ মণ্ডল অবশ্য ২০০১-০২ সালে ভারতের সরকারি চ্যানেল দূরদর্শনে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, তিস্তার পানি কোনো দিনই দেওয়া যাবে না। কারণ, হিমবাহ থেকে পানি আসার মাত্রা ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক অবস্থান জানতে বর্তমান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে বেশ কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পে পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় মাপা হয়। বছর ছয়েক আগে গজলডোবায় সেচ মন্ত্রণালয়ের অফিসে বসে এক সরকারি কর্মকর্তা দেখিয়েছিলেন, কীভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি মাপা হয় এবং তার পরিমাণ কত। কিন্তু এই তথ্য ‘ক্লাসিফায়েড’ বা গোপনীয় হিসেবে স্বীকৃত।

পানি পরিমাপের সঙ্গে যুক্ত এক গবেষক বলেন, ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে কয়েক যুগের তথ্য আছে। কিন্তু তা বরাবরই গোপনীয়। ফলে তা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে বাইরে আসবে না।

এ কারণে ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা নিয়ে একটি আনুপূর্বিক সমীক্ষা করার পরও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ নিয়ে একটি শব্দও বলা হয়নি। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র অতীতে বারবারই বলেছিলেন, বিষয়টি ছাড়া পরিবেশবিষয়ক যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি রাজি আছেন।

অধ্যাপক সুবীর সরকারও বলেই দিলেন, তিস্তা নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু কোনো ‘ডেটা’ চাওয়া যাবে না। তথ্য গোপন রাখার একটি ব্যাখ্যাও দিলেন তিনি।

অধ্যাপক সুবীর বলেন, যেহেতু চুক্তি হয়নি, তাই তথ্য জনসমক্ষে নেই। আর আন্তর্জাতিক চুক্তি নেই বলে তথ্য প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না। যেমন গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে হয়েছে, সিন্ধু নদের ক্ষেত্রে হয়েছে, ঝিলম নদীর ক্ষেত্রে হয়েছে। এই তথ্য এখন সারা পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। এটা ভাবলে ভুল হবে, এটা শুধু আন্তর্জাতিক নদীর ক্ষেত্রেই হচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরেও এই সমস্যা রয়েছে। কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের সীমান্তবর্তী কাবেরী নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছে।

এই অধ্যাপক বলছেন, বিষয়টা কিছুটা ডিম আগে না মুরগি আগের মতো। চুক্তি নেই বলে তথ্য প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তথ্য নেই বলে প্রকাশ্যে বিতর্ক করে নাগরিক সমাজের পক্ষে মতামত দেওয়া বা নিজ নিজ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না।

তিস্তার সমাধান জরুরি

অথচ ভারতের বিশেষজ্ঞদের প্রত্যেকেই একমত, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, দুই দেশের সম্পর্ক এবং ভূ-কূটনৈতিক কারণে তিস্তা সমস্যার সমাধান বিশেষভাবে জরুরি।

অধ্যাপক সরকারের কথায়, তিস্তা একটি ফালতু সমস্যা। কারণ, তিস্তার যা পানি, তাতে বাংলাদেশের সমস্যা মিটবে না এবং ভারতেরও মেটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তথ্যের আদান-প্রদান হলে এবং তা জনসমক্ষে এলে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবসান হয়।

সিনিয়র ফেলো উত্তম কুমার সিনহার মতে, তিস্তার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের। এতে বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারতকে একটি ‘অনমনীয় এবং অসংবেদনশীল’ দেশ মনে করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী রাজনীতিতেও একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। তাই রাতারাতি পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান না হলেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন/সীমান্ত/আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পারস্পরিক স্বার্থের সমস্যা সমাধানে ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠিত হয়। সিনহার মতে, এটি একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া’ এবং নিয়মিত জেআরসির বৈঠক করা উচিত।

সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তিগত আলাপ-আলোচনা চললেও ১২ বছর পর গত বছরের আগস্টে জেআরসির বৈঠক হয়েছিল। ফলে কুশিয়ারা নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন-সংক্রান্ত সমঝোতার (এমওইউ) বিষয়বস্তু চূড়ান্ত হয়, যা শেষ পর্যন্ত গত সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই সমঝোতাকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করে সিনহা বলেন, ‘আমরা আশা করতে পারি, অন্য সাতটি নদ-নদী—ধরলা, দুধকুমার, ফেনী, খোয়াই, গোমতী, মনু ও মুহুরীর পানিবণ্টন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে।

এর মাধ্যমে তিস্তার ওপর থেকে মনোযোগ খানিকটা সরবে। তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক, আবেগপ্রবণ ও বিভেদমূলক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।’

তবে একটি সঠিক ‘হাইড্রোলজিক্যাল প্রোফাইলিং’ এবং মূল্যায়ন ব্যতীত পানিবণ্টন চুক্তির কোনো মানে হয় না বলেও মনে করেন সিনহা।

সিনহা বলেন, স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে (১৯৫০-১৯৭০) পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গঙ্গা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা তথ্যের অভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৬৯ সাল নাগাদ দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আদান-প্রদান হয়েছিল এবং একটি সংলাপ শুরু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।