এইচআরএসএসের প্রতিবেদন

৬৮ রাজনৈতিক সহিংসতা, ২৫টিই বিএনপির অন্তঃকোন্দলে

দেশে গত মাসে (অক্টোবর) কমপক্ষে ৬৮টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০০ জন। এসব সহিংসতার মধ্যে ২৫টি ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে। এ ছাড়া বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৬টি, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ৩টি ও আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ১টি সহিংসতা ঘটে। অন্য ১৩টি ঘটনা ঘটেছে অন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে।

আজ সোমবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, অক্টোবর ২০২৪’ শীর্ষক মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমে ওই প্রতিবেদনে পাঠিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৯ জনের মধ্যে অন্তঃকোন্দলে বিএনপির ৩ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৬ জন নিহত হয়েছেন বিরোধীপক্ষের হামলায়। ৯ জন নিহত ব্যক্তির মধ্যে ৪ জন বিএনপির, ২ জন আওয়ামী লীগের আর ৩ জন ইউপিডিএফ কর্মী–সমর্থক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ৬টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে অক্টোবর মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় হওয়া মামলায় অনেক নিরপরাধ ও কিছু মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নামে কমপক্ষে ৫৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪ হাজার ২৩২ জনকে নাম উল্লেখ করে এবং ৬ হাজার ২৫৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ মাসে কমপক্ষে ৩১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী অন্তত ৩০০ জন।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অক্টোবর মাসে অন্তত ২১টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪৫ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় ২ জন নিহত ও অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৩ জন, হুমকি দেওয়া হয়েছে ২ জনকে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন। এ ছাড়া ৪টি মামলায় ৯ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে উন্নতি ঘটলেও সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় কিছু ক্ষেত্রে বরং মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, শ্রমিক হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নির্যাতন ও হত্যা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকজন আসামিকে আদালতে হাজির করার সময় দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।