উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ২০০ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বোরো ধানের চাষ করে রেকর্ড ফলন হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের চরগাছিয়া গ্রামের একটি মাঠে ২০০ বিঘা জমি প্রথমবারের মতো বোরো চাষের আওতায় এসেছে। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে পতিত থাকত। এ বছর মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে ব্রি-ধান ৬৭, ৭৪, ৮৯, ৯২, ৯৯ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। ধান কাটার পর রেকর্ড ফলন পাওয়া গেছে। প্রতি বিঘাতে ব্রি-ধান৮৯ হয়েছে ৩৭ মণ, ব্রি৬৭ হয়েছে ২৮ মণ, ব্রি৭৪ পাওয়া গেছে ২৮ মণ, ব্রি৯৯ হয়েছে ২৮ মণ ও ব্রি৯২ হয়েছে ৩৩ মণ। গতকাল দুপুরে নমুনা শস্য কাটার পর এই রেকর্ড ফলন পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে এবং উপকূলীয় শস্য নিবিড়ীকরণ কর্মসূচি’র আওতায় এই ২০০ বিঘা (২৭ হেক্টর) জমিতে ব্রি-ধান৬৭, ব্রি-ধান৭৪, ব্রি-ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি-ধান৯৭ ও ব্রি-ধান৯৯ জাতের ধান চাষ করা হয়। ৩০০ জন কৃষককে বীজ, সেচ, সারসহ সব উপকরণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। খাল থেকে পানি এনে সেচ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হয় বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
গতকালের নমুনা কর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মো. মনিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান, ব্রি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাজী শিরিন আখতার জাহান, বরগুনার উপপরিচালক সৈয়দ জোবায়দুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর বলেন, ‘ধানের অবিশ্বাস্য ফলন হয়েছে। দেশের আর কোথাও বিঘাতে ৩৬ মণ ফলন পাইনি। অথচ উপকূলীয় এলাকার এ রকম জমি পতিত থাকে, যা আমাদের জন্য বিরাট ক্ষতির। এ বছর সম্ভাবনাময় পাঁচ থেকে ছয় জাত চাষ করেছি। যেগুলোর ফলন তুলনামূলক বেশি পাওয়া যাবে, আগামী বছর সেটির চাষ করা হবে।’
দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকা। বরিশাল অঞ্চলে বিশেষত বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় শুষ্ক মৌসুমে অনেক জমি পতিত থাকে। লবণাক্ততার কারণে বেশির ভাগ এলাকায় সারা বছরে একটি ফসল হয়। আমন ধান তোলার পর বছরের বাকি সময়টা মাঠের পর মাঠ জমি অলস পড়ে থাকে। এ ছাড়া লবণপানির ভয়াবহতার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়।
এর একটি কারণ হচ্ছে, সেচ-সুবিধার অভাব। যদিও এই অঞ্চলে তেঁতুলিয়া, বলেশ্বর, বিষখালী, পায়রা, কীর্তনখোলাসহ বিভিন্ন বড় নদনদীর মিষ্টি পানির অনেক প্রাপ্যতা রয়েছে। সে জন্য সেচ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ‘উপকূলীয় শস্য নিবিড়ীকরণ’ নামের একটি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর বরগুনা সদর উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫০০ হেক্টর বেশি।