কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের দুর্গম খঞ্জনীঘোনা এলাকায় বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করা একটি তিনতলা ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। তিনটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা চার কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। আজ বুধবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান আশ্রয়কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন।
মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইডের আর্থিক সহযোগিতায় কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ও গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস) আশ্রয়কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। এটি খঞ্জনীঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হবে।
একই দিনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে আরও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এসব আশ্রয়কেন্দ্র হলো বান্দরবানের সদর উপজেলার কাংরাছড়ি রবারবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুহালং হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু গর্জনবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র।
চকরিয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাজমুল আবেদীন চৌধুরী, ইউএসএইডের মিশন ডিরেক্টর রিড এসলিম্যান, হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অফিসের ডিরেক্টর মুস্তফা এল হামজাউই এবং কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাস।
চকরিয়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে বিএমচরের বটতলী স্টেশন থেকে পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার গেলেই খঞ্জনীঘোনা গ্রাম। এই গ্রামের বিলের মধ্যে সুরম্য তিনতলাবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন। পাকা গেটের ওপর লেখা-খঞ্জনীঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গেট দিয়ে ভবনটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে তিনতলায় ওঠার বাঁকানো র্যাম্প।
স্থানীয় লোকজন বলেন, খঞ্জনীঘোনা গ্রামটি খুবই দুর্গম ও নিচু। বন্যা হলেই কপালে ভাঁজ পড়ে এলাকার বাসিন্দাদের। সহায়সম্পদ যেমন ভেসে যায়, তেমনি গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ায় এখন সেই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাসিন্দারা।
উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার-বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজার জেলায় চারটি, বান্দরবান সদর উপজেলায় ১০টি, লামা উপজেলায় ৬টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫টিসহ মোট ২৫টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে তিনতলা ৪টি, দোতলা ৯টি ও একতলাবিশিষ্ট ১২টি ভবন রয়েছে। সব কটি ভবনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
খঞ্জনীঘোনা এলাকার বাসিন্দা আবু সায়েদ (৪৬) বলেন, দেড় কিলোমিটার দূরে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়কটি বসতবাড়ি থেকে উঁচু। বন্যা হলে সবাই আসবাব, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে সড়কটিতে আশ্রয় নেন। এখন তিনতলাবিশিষ্ট ভবনটি নির্মিত হওয়ায় সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।
খঞ্জনীঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল হাসান, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলে, আগে তাদের একটি ভাঙাচোরা টিনের বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে হতো। এখন বড় পাকা ভবন হয়েছে। সেখানে ক্লাস করতে পারবে তারা। এতে সবাই অনেক খুশি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুল আলম বলেন, বর্ষায় একটু পানি বাড়লেই আগের ভবনটিতে পানি ঢুকত। তখন ক্লাস করা সম্ভব হতো না। এখন থেকে বর্ষা মৌসুমে ক্লাস বন্ধ করতে হবে না। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সহজে পড়াশোনা করতে পারবে। তাদের জন্য র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, খঞ্জনীঘোনা গ্রামটি দুর্গম হওয়ায় অনেক সময় বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে চান না। এই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হওয়ায় দুই হাজার পরিবারের সদস্যরা বন্যা-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবে।