জমি ফেরত পেতে তিন পার্বত্য জেলায় ২২ হাজার ৪৬৮ আবেদন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের সময় ১৯৭৯ সালে স্নেহ কুমার চাকমা রাঙামাটির লংগদু উপজেলা থেকে একই জেলার বাঘাইছড়িতে পালিয়ে যান। এ সময় তাঁর বসতভূমি ও চাষের জমি দখল হয়ে যায়। পার্বত্য চুক্তি হলে ১৮ বছর পর ১৯৯৭ সালে তিনি নিজের এলাকায় ফেরেন। এসে দেখেন, বসতভূমি, চাষের জমি—সবই দখল হয়ে গেছে। অগত্যা আগের জমির পাশে খালি একটি জায়গায় বসবাস শুরু করেন।
লংগদু উপজেলার ঘনমোর মৌজার তিন একর জমি ফিরে পেতে স্নেহ কুমার ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনে আবেদন করেন। আট বছর ধরে সেই আবেদন পড়ে আছে।
শুধু স্নেহ কুমার নন। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বাসিন্দাদের প্রায় সাড়ে ২২ হাজার আবেদন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে পড়ে আছে। কারও আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি।
জমা থাকা মোট আবেদনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৯৪১টি রাঙামাটির। এরপর খাগড়াছড়ির ৭ হাজার ৯৭৫টি এবং বান্দরবানের ৪ হাজার ৫৫২টি আবেদন রয়েছে। কমিশন এখনো আবেদনগুলো যাচাই–বাছাইও করতে পারেনি।
১৯৯৯ সালে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হয়। এরপর রাঙামাটিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ও বান্দরবানে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের শাখা কার্যালয় খোলা হয়। দুটি শাখা কার্যালয় খোলা হলেও কমিশনে আবেদনের নিষ্পত্তি শুরুই হয়নি।
কমিশন সূত্র বলছে, কমিশন গঠনের ২৩ বছর পরও আইন প্রয়োগের বিধিমালা হয়নি। এ ছাড়া জনবলসংকটসহ নানা জটিলতায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। অতীতে দীর্ঘদিন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধন নিয়ে জটিলতার কথাও বলছে কমিশন।
পার্বত্য তিন জেলায় জমি নিয়ে সমস্যার শিকড় গভীরে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) তথা শান্তিবাহিনীর সংঘাত চলেছে। সে সময় তিন পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনেকে ভারতে শরণার্থী হন। অনেকে আবার অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হন।
এখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। একবার কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তারা ভূমি হারাল। এরপর সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হলো। শান্তি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চুক্তির মূল শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তারা এখনো ভূমি ফেরত পায়নি।’রাঙামাটির বাসিন্দা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান
১৯৭৯ সাল থেকে দু-তিন বছরে সরকার আড়াই থেকে সাড়ে চার লাখ ভূমিহীন-নদীভাঙনের শিকার বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। সরকার তাদের জমি দেয়।
সরকারের সঙ্গে জেএসএসের শান্তি আলোচনার পথ ধরে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিজ ঘরে ফেরা শুরু করেন। জমির মালিকানা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি তোলে বাঙালি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বলছে, জমি তাঁদের। তাঁদের কাছে বন্দোবস্তের কাগজ আছে। একাধিক আইনে তাঁদের ভোগদখলি ও প্রথাগত অধিকারের স্বীকৃতি আছে। বাঙালিরা বলছে, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে এসব জমি খাস হিসেবে পেয়েছেন। তাঁদের কাছেও কাগজ আছে। ফলে জমির প্রকৃত মালিকানা কাদের, তা বের করাও জটিল।
এ অবস্থায় ১৯৯৭ সালে হয় পার্বত্য চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। পরে ২০০১ সালে এ–সংক্রান্ত আইন হয়।
রাঙামাটি ও বান্দরবান শাখা কার্যালয়ে আলাদা কোনো কর্মী নেই। বেশির ভাগ সময় এসব কার্যালয়ে তালা ঝোলে। মাঝেমধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গেলে তালা খোলা হয়। কমিশন বলছে, কার্যকারিতা না থাকায় এসব শাখায় নতুন করে কোনো আবেদনও পড়েনি।
রাঙামাটি ও বান্দরবানে দপ্তর খোলার আগে তিন পার্বত্য জেলার আবেদন খাগড়াছড়িতে প্রধান কার্যালয়ে যেত। খাগড়াছড়িতে কর্মরত মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালেই শেষ আবেদন জমা পড়ে। কমিশন বলছে, ২২ হাজার ৪৬৮ আবেদনের কোনোটিরই নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে নতুন আবেদন নেওয়া বন্ধ।
খাগড়াছড়িতে ভূমি কমিশনের কার্যালয়ে দেখা যায়, দুজন কর্মী কাজ করছেন। এক পাশে আবেদনের কিছু ধুলোমলিন কাগজ। কমিশনের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার ও সচিব ঢাকায় বসে দাপ্তরিক কাজ সারেন।
টাস্কফোর্স সূত্র বলছে, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে তিন পার্বত্য জেলায় ৮১ হাজার ৭৭৭ পরিবারের খসড়া তালিকা রয়েছে। ভারত প্রত্যাগত ২১ হাজার ৯০০ পরিবারও আবেদন করেছে। এগুলো উপজেলায় যাচাই–বাছাই চলছে। এ ছাড়া ১৯৯৪ সাল থেকে ৮ দফায় সরকার এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২২৩ পরিবারকে ফিরিয়ে এনেছে।
এই তিন শীর্ষ পদের বাইরে কমিশনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ রয়েছে পাঁচটি। বেতন–ভাতা ও প্রশাসনিক ব্যয় মিলে কমিশনের পেছনে সরকারের বছরে খরচ প্রায় সোয়া কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে কমিশনের সচিব (যুগ্ম জেলা জজ) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন কী প্রক্রিয়ায় কাজ করবে, তার একটি বিধিমালা দরকার। কিন্তু এখনো বিধিমালা হয়নি। এ ছাড়া জনবলসহ আরও কিছু জটিলতা রয়েছে। তাই কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
আইন সংশোধনের ছয় বছরেও বিধিমালা হয়নি। এ জন্য বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। অনেকে ভূমি কমিশনের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেনভারত প্রত্যাগত শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুন্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা
জমা থাকা মোট আবেদনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৯৪১টি রাঙামাটির। এরপর খাগড়াছড়ির ৭ হাজার ৯৭৫টি এবং বান্দরবানের ৪ হাজার ৫৫২টি আবেদন রয়েছে। কমিশন এখনো আবেদনগুলো যাচাই–বাছাইও করতে পারেনি।
খাগড়াছড়িতে কমিশনে ১৪ বছর ধরে আটকে আছে ত্রিশঙ্কু মণি চাকমার আবেদন। ১৯৮৪ সালে সংঘাতের সময় তাঁর বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি খাগড়াছড়ির পানছড়ির সব ফেলে ভারতের ত্রিপুরায় চলে যান। ১০ বছর পর ১৯৯৪ সালে ফিরে বসতভিটা পেলেও ফিরে পাননি সাড়ে সাত একর জুমচাষের জমি। কারণ, সেখানে তখন বাঙালি বসতি।
জমি ফিরে পেতে ত্রিশঙ্কু ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ভূমি কমিশনে আবেদন করেন। কোনো ফল না পেয়ে হতাশ ত্রিশঙ্কু বছর তিনেক আগে আদালতে মামলা করেন।
রাঙামাটির বাসিন্দা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান তিন পার্বত্য জেলায় সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। একবার কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তারা ভূমি হারাল। এরপর সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তু হলো। শান্তি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চুক্তির মূল শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তারা এখনো ভূমি ফেরত পায়নি।’
জমি নিয়ে জটিলতার মীমাংসা করতে না পারার পেছনে বড় কারণ হিসেবে শরণার্থীদের তালিকা না থাকার কথা বলছে কমিশন। তারা বলছে, এই দায়িত্ব ছিল টাস্কফোর্সের। ১৯৯৭ সালের মার্চে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার জন্য টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রাখা হয় সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও শরণার্থী প্রতিনিধি।
ওই বছরের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতে টাস্কফোর্সকে অঙ্গীভূত করা হয়। ভারত সরকার তখন সে দেশে থাকা শরণার্থীদের হালনাগাদ তালিকা সরবরাহ করেছিল।
পার্বত্য চুক্তির পর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অভ্যন্তরীণ বাঙালি উদ্বাস্তুদের তালিকা করা হয়। শরণার্থীদের রেশন দেওয়া, ভারত প্রত্যাগতদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ নানা বিষয় নিয়ে টাস্কফোর্স কাজ করে।
দুই বছর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভূমি কমিশনের সর্বশেষ সভা হয় বান্দরবানে। সভার আলোচ্যসূচিতে বলা হয়, টাস্কফোর্স থেকে শরণার্থীদের তালিকা পাওয়া যায়নি। সভায় এ বিষয়ে টাস্কফোর্সকে তাগিদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রায় তিন বছর পর গতকাল বুধবার রাঙামাটিতে কমিশনের সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু একটি সংগঠন এর প্রতিবাদে জেলায় অবরোধ ডেকে বসে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার সভা স্থগিত করা হয়। কমিশনের সচিব নেজাম উদ্দীন বলেন, সভায় জমা আবেদন নিয়ে আলোচনার কথা ছিল।
একটা প্রজন্ম তো মরেই গেছে। আর কত দিন এই ভূমি বিরোধ? এবার সমাধান হোকচাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়
টাস্কফোর্স সূত্র বলছে, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে তিন পার্বত্য জেলায় ৮১ হাজার ৭৭৭ পরিবারের খসড়া তালিকা রয়েছে। ভারত প্রত্যাগত ২১ হাজার ৯০০ পরিবারও আবেদন করেছে। এগুলো উপজেলায় যাচাই–বাছাই চলছে। এ ছাড়া ১৯৯৪ সাল থেকে ৮ দফায় সরকার এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২২৩ পরিবারকে ফিরিয়ে এনেছে।
টাস্কফোর্সের নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩ পরিবারকে টাস্কফোর্স ত্রাণ দিচ্ছে।
ফিরে আসা কেউ কেউ নিজের ভিটায় থাকলেও অনেকে ভিটা ও চাষাবাদের জমি ফিরে পাননি। অনেকে আত্মীয়স্বজনের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ জমি কিনে কিংবা ভাড়া ঘরে থাকছেন।
গোড়া থেকেই কমিশনের পথচলা মসৃণ ছিল না। ১৯৯৯ সালে গঠনের পর প্রথম কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার গ্রহণের আগেই মারা যান। ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল করিম দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন।
২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর কমিশনের চেয়ারম্যান হন বিচারপতি মাহমুদুর রহমান। তিনি ২০০৭ সালে মারা যান। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। পরে পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপের উদ্যোগ নেন। একই সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেন। তখন প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়ে।
কিন্তু আইন সংশোধন না করে বিরোধ নিষ্পত্তি কিংবা ভূমি জরিপের উদ্যোগ পাহাড়ি ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। বিরোধিতাকারীরা আইনের অনেক ধারা উপধারা পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিযোগ করেন। পরে ২০১৬ সালে এই আইন সংশোধন করা হয়। তাতে কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা এবং কমিশনের কোরামসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়। ২০১৭ সালে বিচারপতি আনোয়ার উল হককে দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।
তবে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধন হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুন্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বলেন, আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু বিধিমালা প্রণয়ন করা যায়নি।
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। তবে তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ ব্যাপারে সন্তোষিত চাকমা বলেন, ‘আইন সংশোধনের ছয় বছরেও বিধিমালা হয়নি। এ জন্য বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। অনেকে ভূমি কমিশনের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন।’
এ বিষয়ে কমিশনের সচিব নেজাম উদ্দীন বলেছেন, বিধিমালা প্রণয়ন করবে সরকার। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
আঞ্চলিক পরিষদ খসড়া একটি বিধিমালা করে দিয়েছে জানিয়ে চাকমা সার্কেলের রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, এ বিষয়ে তিনি ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের সদস্যরা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন সার্কেল প্রধান বা রাজা, বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি ও কমিশনের চেয়ারম্যান। কমিশনের বিভিন্ন সভায় সব সদস্য উপস্থিতও থাকেন না। যেমন ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনের সর্বশেষ সভায় এই পাঁচ সদস্যের কেউই ছিলেন না।
কমিশনের সচিব নেজাম উদ্দীন বলেন, করোনার কারণে ২০২০ সালের পর আর সভা হয়নি। কমিশন এবং অন্যান্য সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পরবর্তী সভা আহ্বান করবেন।
অনেক আবেদনকারী মারাও গেছেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ভালুকখাইয়া মৌজার হেডম্যান মং শৈ ফু আড়াই একর ভূমি ফেরত
পেতে কমিশনে বেশ কয়েক বছর আগে আবেদন করেন। কিন্তু কমিশন আজ পর্যন্ত তাঁকে ডাকেনি। তাই তিনি আদালতে মামলা করেন। মং শৈ ফু বলেন, ‘কমিশন কবে কার্যকর ভূমিকা নেবে, বুঝতে পারছি না। জীবদ্দশায় জায়গা ফেরত পাব কি না জানি না।’
চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা প্রজন্ম তো মরেই গেছে। আর কত দিন এই ভূমি বিরোধ? এবার সমাধান হোক।’