দেশে হয়তো ঘোরাঘুরি অনেক হয়েছে, ‘ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া’ বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের রূপ-রস–গন্ধের অনেকটাই উপভোগ করেছেন। এবার কি তাহলে সীমানা ছাড়ানোর কথা ভাবছেন? পরিকল্পনা করছেন প্রথমবার বিদেশে যাওয়ার? তাহলে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজানো উচিত।
প্রথমত, এক দেশে থেকে অন্য দেশে ঘুরতে গেলে সাধারণত প্রয়োজন হয় ছয় মাস মেয়াদসহ পাসপোর্ট এবং নির্দিষ্ট ভিসার। তাই আগে থেকেই দেখে নিন, পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কি না। মেয়াদ না থাকলেও দুশ্চিন্তা নেই, এখন সহজে ও দ্রুততম সময়েই নতুন করে বানিয়ে নেওয়া যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট। পাসপোর্ট ও ভিসা নিশ্চিত হওয়ার পরই আসে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী করবেন ইত্যাদির বিস্তারিত পরিকল্পনা।
প্রথমবার বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত? এ বিষয়ে কথা হয় এমঅ্যান্ডএন হলিডেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মেয়াদ এবং ভিসা নিশ্চিত করবার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যেমন যে দেশে যাচ্ছেন, সে দেশে যাওয়ার শর্তগুলো যাত্রী পূরণ করতে পারছেন কি না। এসব শর্তের অনেকগুলো থাকে লিখিত, অনেকগুলো অলিখিত। যেগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আগেই জেনে নিতে হবে।’
মামুনুর রশিদ আরও জানান, এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে একদম ফ্রেশ পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া যায় না। সেসব দেশের ভিসা পেতে হলে আগে থেকে অন্য কিছু দেশের ভিসা-পাসপোর্টে থাকতে হয়।
এ ছাড়া যে দেশের ভিসা চাচ্ছেন, সে দেশের ভিসা পেতে কী কী প্রয়োজন, সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
যে দেশে বেড়াতে যেতে চান, সে দেশের ভিসার জন্য কমপক্ষে দুই মাস আগে আবেদন করা ভালো। ভিসা পেতে অনেক ক্ষেত্রেই বেশি সময় লেগে যায়। তা ছাড়া থাকে উড়োজাহাজের টিকিট কাটার ব্যাপারও। আগে ভিসা হয়ে গেলে আগেভাগে সাশ্রয়ী দামে উড়োজাহাজের টিকিটও কেটে ফেলা যায়।
অনেক দেশে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভিজিট করলেও সেসব দেশের নানা ধরনের নিয়মকানুন থাকে। যেমন মহামারিপ্রবণ কোনো এলাকায় গেলে কিছু নির্দিষ্ট টিকা সনদের প্রয়োজন পড়ে। তাই যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে এ ধরনের শর্ত আছে কি না, তা–ও জেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার চেয়ে সেখানে থাকার সমস্যাই বেশি ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে হোটেলের চাহিদাও। ফলে শেষ মুহূর্তে অথবা গন্তব্যে পৌঁছে হোটেল বুক করার সুযোগ অনেকটাই কমে এসেছে। অগ্রিম বুকিং করতে বেশির ভাগ মানুষই বিদেশি ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন।
ছোটখাটো আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো মাথায় না রাখলে বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে পড়তে পারেন বিড়ম্বনা বা বিপদে। যেমন আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্রের ফটোকপি ব্যাগে রেখে দেওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ ডেটা, টকটাইমসহ সংশ্লিষ্ট দেশের একটা মোবাইল সিম কিনে নেওয়া ইত্যাদি।
ভ্রমণে আপনার অন্যতম সঙ্গী হবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোও। সময়মতো সেগুলো কাজ না করুক—এমন পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই আপনি কখনো পড়তে চান না। তাই যে দেশে যাচ্ছেন, সেখানে কী ধরনের অ্যাডাপ্টর, কনভার্টার, ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়, সেসব সম্পর্কে জেনে নিন।
আগে থেকেই এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে প্রথমবার বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে অনেকটাই। ভ্রমণ হয় আনন্দ ও স্মৃতিময়।