জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে আঁকা গ্রাফিতি দেখছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে আঁকা গ্রাফিতি দেখছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে

হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ নানা বিষয়ে বললেন শিক্ষার্থীরা

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক ঢাকা সফরের প্রথম দিনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে জুলাই অভ্যুত্থান হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। অনেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ফলকার টুর্ক কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থী শ্যামলী সুলতানা ফলকার টুর্ককে বলেন, ‘আমাদের জুলাই বিপ্লবে হাজারো বেসামরিক মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, সাধারণ জনগণের ওপর নির্বিচার নিপীড়ন করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে জনগণের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দাবি করছি।’ কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে নারীদের আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে নিজের অভিজ্ঞতা এবং গত ১৫ বছর শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রেজোয়ান আহমেদ রিফাত। তিনি বলেন, ‘আমি এই অপরাধীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার চাই।’ ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ফ্যাসিবাদে ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংহতির আহ্বান জানান তিনি।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে ফলকার টুর্কের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফ মাহদী।

পরে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। জুলাই হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ প্রশ্ন করেন, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ কী ব্যবস্থা নেবে? আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও শ্লীলতাহানির ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে, সে প্রশ্ন করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সিনথিয়া জাহান আয়েশা। তাঁর আরও প্রশ্ন ছিল, ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে বাঁচতে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠাতে কমিশন কী ভূমিকা রাখছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বৈষম্য ও প্রান্তিকীকরণের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চংগ্যা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

ফলকার টুর্ক বলেন, ‘সারা বিশ্বে দলীয় রাজনীতি সংকটে আছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানবাধিকারও সংকটে আছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, সংকটে আছে মূলত মানবাধিকারের বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব।’

ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁরা একটা তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠিয়েছেন। এই মিশন গত কয়েক মাসের ঘটনা খতিয়ে দেখবে। এখনো এ নিয়ে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে বিচারের পাশাপাশি পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও বিচার বিভাগের সংস্কারেরও বিষয় রয়েছে।

সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষার কথা উল্লেখ করেন ফলকার টুর্ক। ফিলিস্তিনের গাজার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গাজা আমাদের একটি বড় উদ্বেগের জায়গা। কিছু সিদ্ধান্তে আমরাও মাঝেমধ্যে আশাহত হয়ে পড়ি।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। আয়োজনের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।