মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে চক্র গঠনের দায় দুই দেশের সরকারকে দিলেন শীর্ষ রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার নেতারা। সংসদ সদস্যরাও এজেন্সি বাছাইয়ের দায় মালয়েশিয়া সরকারের ওপর চাপালেন। শেষ সময়ে কর্মী যেতে না পারার দায়ও মালয়েশিয়ার সরকারের দিকে ঠেলে দিলেন ব্যবসায়ীরা।
আটকে থাকা মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের সমস্যার সমাধান, বাস্তবতার আলোকে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে ১০১টি এজেন্সির প্যানেলের পক্ষ থেকে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। তবে বায়রার সভাপতি-মহাসচিব দুজনেই বক্তব্য দেন এতে।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বায়রার নেতারা। বায়রার সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা তো মালয়েশিয়ায় বলতে যাইনি। এর আগে ১০ এজেন্সিকে বাছাই করে দিয়েছে তারা। ওই সময় তিন এমপি (সংসদ সদস্য) তো সুযোগ পাননি। এবারও তারা এজেন্সি বাছাই করে দিয়েছে। আমি তো তদবির করতে যাইনি, আর কেউ গেছে কি না, তা জানি না। তবে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা যে–ই করুক।’
সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘সিন্ডিকেট বলে কোনো শব্দ নেই। মালয়েশিয়ার সরকার এজেন্সি বাছাই করেছে। আল্লাহর রহমতে কাকতালীয়ভাবে আমরাও সিলেক্ট হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, শ্রমিক পাঠানো, ভিসা কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে লোক পাঠাননি। শুধু প্রক্রিয়াকরণের কাজ করেছেন। সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি।
চক্র গঠনে সংসদ সদস্যরা কোনো চক্রান্ত করেননি। এজেন্সি চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া। তাতে করে ১০১ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে এমপিদের এজেন্সিও আছে।আলী হায়দার চৌধুরী, মহাসচিব, বায়রা
বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, দুই দেশের সরকার চুক্তি করে মালয়েশিয়াকে এজেন্সি বাছাইয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকার এজেন্সি বাছাই করেছে আর বাংলাদেশের সরকার চুক্তিতে সম্মতি দিয়ে সেই সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের রিক্রুটিং এজেন্সিও আছে। তাঁদের ব্যবসা করার অধিকার আছে, তাঁরা ব্যবসা করবেন।
বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, চক্র গঠনে সংসদ সদস্যরা কোনো চক্রান্ত করেননি। এজেন্সি চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া। তাতে করে ১০১ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে এমপিদের এজেন্সিও আছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১০১টি এজেন্সির মধ্যে সরকারি এজেন্সি বোয়েসেল ও মো. নূর আলীর এজেন্সি ইউনিট ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডও আছে। নূর আলীর নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিল ও নির্বাচনী সুবিধা নিতে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নামে–বেনামে তিনি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার পরও বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে অপপ্রচারে নেমেছেন।
শেষ সময়ে কর্মী যেতে না পারার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারকে দোষ দেন ব্যবসায়ীরা। আলী হায়দার বলেন, ১৫ মে থেকে ভিসা বন্ধ করে দিলে শেষ দিকে এমন চাপ তৈরি হতো না। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। রুহুল আমিন বলেন, বিশেষ ফ্লাইটের জন্য আগে থেকে সংখ্যা অনুমানের সুযোগ ছিল না। কত কর্মী যাবে, তা ধারণার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ, শেষ পর্যন্ত ভিসা দিয়েছে মালয়েশিয়া, ৩০ মে পেয়েছে কেউ কেউ। তাদের তো পাঠানো সম্ভব নয়।
বিএমইটি ছাড়পত্র নিয়েও ১৬ হাজার ৯৭০ কর্মী যেতে পারেননি মালয়েশিয়া। এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, যত কর্মীর ছাড়পত্র হয়, তাঁদের সবাই শেষ পর্যন্ত বিদেশে যান না। গড়ে দুই থেকে তিন শতাংশ নানা কারণে বাদ পড়েন। এবার শেষের দিকে বিভিন্ন অভিযোগে ৪৭টি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মালয়েশিয়া। ওই সব কোম্পানির নামে যাঁদের ভিসা হয়েছে, তাঁরা যেতে পারেননি। উড়োজাহাজ টিকিটের জন্য যেতে পারেননি, এমন সংখ্যা বেশি নয়।
বায়রার সাবেকে মহাসচিব ও মালয়েশিয়া চক্রের আলোচিত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন ওরফে স্বপন বলেন, যেতে পারেননি, এমন প্রকৃত কর্মীর সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার। তাঁরাই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁদের পাঠানোর জন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। এটি ব্যর্থ হলে তাঁদের অভিবাসন খরচ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আবেদন করলে মূল এজেন্সির কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।
তবে আলী হায়দার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিশ্চিত নয়। মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে বায়রা সহায়তা করবে। এ কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তালিকা তৈরি করবে।