চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সস্প্রতি তোলা
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সস্প্রতি তোলা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কমছে গাড়ির টোল, চলবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা

চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরুর আগেই টোলের হার কমানো হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে গাড়ি ভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমছে টোল। একই সঙ্গে আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা তুলে নেওয়া হয়েছে।

টোলের হার পরিবর্তন করে নতুন করে টোল প্রস্তাব করে তা অনুমোদনের জন্য ৩ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। অবশ্য এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পায়নি সিডিএ। অনুমোদন হলেই টোল আদায় শুরু করবে সিডিএ। এখন পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল করছে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় গত বছরের ১৪ নভেম্বর এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে ওই সময় এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের পর গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

কোন গাড়িতে কত কমল টোল

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১২ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে টোলের হার প্রস্তাব করেছে সিডিএ। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের দিতে হবে ৩০ টাকা করে। প্রস্তাবিত টোল আদায়ের তালিকায় মোটরসাইকেল রাখা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনা রোধে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রকৌশলীরা।

এদিকে প্রথম দফায় চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী, কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য  ১০০ টাকা করে টোল নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার প্রান্ত ভেদে কারের জন্য দিতে হবে ৫০ ও ৮০ টাকা করে। জিপ গাড়ির জন্য নেওয়া হবে ৭০ ও ১০০ টাকা করে। মাইক্রোবাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ ও ১০০ টাকা।

যে প্রান্ত দিয়েই ওঠানামা করুক, পিকআপের জন্য টোলের আদায় হার চূড়ান্ত করা হয়েছিল ১৫০ টাকা। এখন প্রান্ত ভেদে ১৩০ ও ১৫০ টাকা করে নেওয়া হবে।  আগে মিনিবাসের জন্য দুই শ টাকা করে টোলের হার নির্ধারণ করা হলেও এখন কমিয়ে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০০ টাকা আদায়ের প্রস্তাব করেছে সিডিএ। বাসের জন্য এই হার সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা। আগে ছিল ৩০০ টাকা।

চার চাকার ট্রাকের জন্য ২০০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, তবে এখন সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। ছয় চাকার ট্রাকের জন্য এখন আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০০ টাকা করে। আগের বারও একই হার ছিল।

এবার কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলরের জন্য ৪৫০ টাকা করে টোল আদায়ের প্রস্তাব করেছে সিডিএ। আগে ছিল ৫০০ টাকা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে জিইসি মোড় থেকে ওঠে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নামার সুযোগ রয়েছে। আবার পতেঙ্গা থেকে ওঠে নগরের টাইগারপাস, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নামার জন্য র‍্যাম্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিমতলায়, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডে ওঠানামার নয়টি র‍্যাম্প থাকবে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষে তা মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের মাধ্যমে সরকারের ঋণের টাকা পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে। এর আগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সিডিএর টোল প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর টোলের হার নির্ধারণ নিয়ে আবার পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিডিএ বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে যৌক্তিকতাসহ টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের আলোকে টোল আদায়ের হার যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণের জন্য ২৮ অক্টোবর সিডিএর ৪৬২তম বোর্ড সভায় নতুন করে টোল প্রস্তাব করা হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়।

টোলের হার কমানোর বিষয়ে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফায়ও তাঁরা টোলের সহনীয়ভাবে নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় সিডিএর প্রস্তাবের চেয়ে একটু বেশি নির্ধারণ করে টোলের হার চূড়ান্ত করেছিল। এখন নতুন সরকারের আবার সহনীয় টোলের হার নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই আগে চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার কমিয়ে নতুন করে নির্ধারণ করে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনুমোদন পেলেই টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে। তখন এক্সপ্রেসওয়ে গাড়ি চলাচলেও শৃঙ্খলা আসবে।

মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর পক্ষপাতী নন তাঁরা। কিন্তু অটোরিকশা বন্ধ করে দিলে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ কমে যাবে। মানুষ যাতে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারেন, এ জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বিপজ্জনক চলাচল ও দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

এক্সপ্রেসওয়েতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবহার বাড়াতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।