ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। আজ সোমবার ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) বিল–২০২৪’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক সংসদ সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান এবং প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত বিধানের বিরোধিতা করেন।
এর আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, চৌকিদার ও দফাদারদের সম্মানী বাড়ানোর দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ।
আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ইউপি সদস্যদের সম্মানী সম্মানজনক হওয়া উচিত। এখন সরকারি টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নিজের আয় থেকে মিলিয়ে চেয়ারম্যানের ভাতা ১০ হাজার টাকা আর সদস্যের ভাতা ৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় এটি দ্বিগুণ করা উচিত। তিনি বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান আগে আইনে ছিল না। এর সুবিধা যেমন আছে, সরকারের স্বেচ্ছাচারের আশঙ্কাও আছে।
বিলের আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেন। তাঁদের সম্মানী খুবই অসম্মানজনক। এটি সম্মানজনক হওয়া উচিত।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এস এম ব্রাহানী সুলতান বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ হয়। তাঁরা এই টাকা কীভাবে তুলবেন। তখন দুর্নীতি করেন। টিআর, কাবিখা বিক্রি করে দেন। এ জন্য দুর্নীতি কমাতে তাঁদের ভাতা বাড়ানো উচিত।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক নিয়োগ সাংঘর্ষিক নয়। এটা সাময়িক। নতুন ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের পর এটি করতে হয়, এখানে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু নেই। আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে চেয়ারম্যান পদে থেকে যাওয়ার উদাহরণও আছে। এই বিধানের মাধ্যমে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কারও পক্ষে দীর্ঘদিন পদে থাকা সম্ভব হবে না।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান ও সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধির যে দাবি সংসদ সদস্যরা করছেন, তার যৌক্তিকতা আছে বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো এলাকাকে ইউনিয়ন ঘোষণার পর বা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হবে। নির্বাচিত পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশাসক নিয়োগ হবে কেবল এক মেয়াদে ১২০ দিনের জন্য। কোনো দৈবদুর্বিপাক, অতিমারি, মহামারি ইত্যাদি বিশেষ ক্ষেত্রে নির্বাচিত পরিষদ গঠন করা সম্ভব না হলে সরকার ওই মেয়াদ যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বাড়াতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সদস্য বা প্রশাসক যদি নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বিদ্যমান আইনে এটি ১০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বিলে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদটির নাম হবে ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
সরকারের জেলা বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইউনিয়ন পরিষদ আছে ৪ হাজার ৫৫৪টি।