অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেলা ১১টায় রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মেট্রোরেলে চড়ে তিনি আসবেন আগারগাঁওয়ে। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল।
২০২২ সালে এসে মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণপরিবহনে নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। তবে বিশ্বে মেট্রোরেল চালু হয়েছে দেড় শ বছরের বেশি সময় আগে। ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬১টি দেশের দুই শতাধিক শহরে গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল চালু হয়েছে।
সময়টা ১৮৬৩ সালের জানুয়ারি, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চালু হয় লোকোমোটিভ রেল। ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে পরিচিত এ মেট্রো নেটওয়ার্ক, যা বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো মেট্রোরেল। ১৮৯০ সালে এসে লন্ডন মেট্রোতে যুক্ত হয় ইলেকট্রিক রেল। বর্তমানে লন্ডন মেট্রোর ১১টি লাইন রয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৪০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার মাটির নিচে। রয়েছে ২৭০টি স্টেশন। প্রতিদিন যাতায়াত করে ৫৪০টির বেশি ট্রেন। লন্ডন মেট্রোরেলে বছরে প্রায় ১১৭ কোটি মানুষ যাতায়াত করে।
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে মেট্রোরেল চালু হয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে। ২০০২ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেসকো। ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে মেট্রোরেল চালু হয়। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের একমাত্র মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, যেটি পরবর্তী সময়ে আর বিস্তৃত হয়নি। অর্থাৎ, গ্লাসগো মেট্রোর লাইনের দৈর্ঘ্য একটুও বাড়েনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বোস্টন সাবওয়ে। এটি চালু হয় ১৮৯৭ সালে। এরপর ১৯০৪ সালের অক্টোবরে নিউইয়র্কে চালু হয় মেট্রোরেল। বর্তমানে দেশটির ব্যস্ততম মেট্রোরেল নেটওয়ার্কগুলোর একটি এটি।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত তিনটি মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক রয়েছে যথাক্রমে জাপানের টোকিও, চীনের বেইজিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। এর মধ্যে টোকিও সাবওয়ে এশিয়ার প্রথম মেট্রো নেটওয়ার্ক, চালু হয় ১৯২৭ সালে। মিসরের কায়রো, তিউনিসিয়ার তিউনিস, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ইথিওপিয়ার আদ্রিস আবাবাসহ আফ্রিকার কয়েকটি শহরেও মেট্রোরেল চালু রয়েছে।
মেট্রোরেল রেল চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় মেট্রোরেল চালু হয়। এটি ভারতের প্রথম মেট্রো নেটওয়ার্ক। বর্তমানে ২টি লাইন ও ৩৪টি স্টেশন রয়েছে কলকাতা মেট্রোয়। লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ৪০ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেট্রোরেল চালু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে। এর ১২টি লাইন রয়েছে। কয়েকটি লাইনের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। স্টেশন ২৮৬টি। লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ৩৯১ কিলোমিটার। ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ততম মেট্রো নেটওয়ার্ক এটি। অন্যদিকে ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাইয়ে মেট্রোরেল চালু হয় ২০১৪ সালের জুনে। দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ৩১। চেন্নাই, পুনে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, লক্ষ্ণৌসহ ভারতের আরও কয়েকটি শহরে মেট্রোরেল চলাচল করে।
পাকিস্তানের একমাত্র মেট্রোরেল রয়েছে লাহোরে। চালু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এটির অরেঞ্জ লাইনের দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ১ কিলোমিটার। স্টেশন রয়েছে ২৬টি। লাহোর মেট্রোয় ব্লু লাইন ও পার্পেল লাইন নামে আরও দুটি লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে এখন উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন হচ্ছে।
উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের নয়টি স্টেশন রয়েছে। পৌনে ১২ কিলোমিটার এ পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। প্রতিদিন (মঙ্গলবার বাদে) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পথে মেট্রোরেল চলবে। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে ট্রেন চালু হতে পারে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এ পথে স্টেশনের সংখ্যা ৭।
তথ্যসূত্র: রেলওয়ে টেকনোলজি, টাইমসট্রাভেল, বিজনেস এলিটস আফ্রিকা, দ্য গার্ডিয়ান, ইনসাইডার ও সংশ্লিষ্ট মেট্রোরেলের ওয়েবসাইট।