আগামীকাল অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে জনগণকে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মানববন্ধনে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনের নামে প্রহসনের একটি নাটক রচিত হতে যাচ্ছে। তাঁরা দেশের সব পর্যায়ের জনগণকে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের পাশাপাশি ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন) ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। ছিলেন কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীও।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘প্রহসনের নির্বাচন, মানে না জনগণ’, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই’, ‘নির্বাচন বর্জন করুন’, ‘৭ তারিখ সারা দিন, প্রিয়জনকে সময় দিন’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা ছিল। মানববন্ধনকারীদের সামনে একটি প্রতীকী ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিল। ব্যালট পেপারে বিভিন্ন নামে সব প্রার্থীর প্রতীক দেখানো হয় নৌকা। এ বিষয়ে মানববন্ধনে বলা হয়, আগামীকালের নির্বাচনে বিভিন্ন পরিচয়ে ও মুখোশে সবাই আসলে নৌকারই প্রার্থী।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘আগামীকালের কথিত নির্বাচনে নৌকার মধ্যে কে ভালো প্রার্থী, তা বাছাই হবে। লোকদেখানো এই ডামি নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমরা নীরবে এই নির্বাচন প্রতিরোধ করব। আমরা ভোট দিতে যাব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সব পর্যায়ের জনগণের প্রতি আহ্বান, আগামীকাল আপনারা ভোট দিতে যাবেন না।’
ভোটাধিকার হরণ করে জনগণের নাগরিক পরিচয় বিলীন করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক। তিনি বলেন, ডামি নির্বাচনে এক দলেরই (আওয়ামী লীগ) কয়েকজন করে প্রার্থী। এটা একটা হাস্যকর নির্বাচন।
ছাত্রশক্তির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘২০০৮ সালের পর দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। আগামীকালের প্রহসনের নির্বাচনকে আমরা লাল কার্ড দেখাতে চাই। এই নির্বাচন আমরা বর্জন করছি।’
আগামীকাল নির্বাচনের নামে প্রহসনের একটি নাটক রচিত হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক সাজিদ উল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটি কলঙ্কিত কালো অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে নতুন করে হত্যা করা হচ্ছে। সবার প্রতি আহ্বান, এই নির্বাচন বর্জন করুন।’
আগামীকালের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জাবির আহমেদ, ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাঈম উদ্দিন প্রমুখ। ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব উমামা ফাতেমা আয়োজন সঞ্চালনা করেন।
মানববন্ধনের পর রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টিএসসির সড়কদ্বীপ প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাপনী বক্তব্যে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘সব পর্যায়ের মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আগামীকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে কেউ এই প্রসহনের নির্বাচনকে বৈধতা দেবেন না।’