নজরুল ইনস্টিটিউট

অতীতে উজ্জ্বল, এখন জরাজীর্ণ

স্বরলিপি সত্যায়নে ইনস্টিটিউটের অর্জন মূল্যবান। ঘাটতি আছে গবেষণা ও প্রচারে। বরাদ্দ থাকলেও সামনে আসছে না নতুন কাজ।

নজরুল ইনস্টিটিউট অতিক্রম করেছে ৩৭ বছর
ছবি: প্রথম আলো

সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশের সেদিন আনন্দের মাপজোখ ছিল না। আদি গ্রামোফোন রেকর্ড শুনে কাজী নজরুল ইসলামের তিনটি গানের স্বরলিপি তৈরির কাজ সদ্য শেষ করেছেন তিনি।

ঢাকা শহরেও তখন ফটোকপির দোকান সহজলভ্য নয়। স্বরলিপির সংকলন প্রকাশে যদি দেরি হয়, তাই ফটোকপির ব্যবস্থা হলো। সুধীন দাশ স্বরলিপির কাগজ তুলে দিলেন অনুজ শিল্পীদের হাতে। নজরুল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এসব গল্প অনেক দিন আগের।

প্রায় চার দশকের যাত্রায় এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় অর্জন নজরুলের গানের শুদ্ধ স্বরলিপি তৈরি, সত্যায়ন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কিন্তু এর বিপরীতে বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে থমকে গেছে গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রচারণার কাজ, যার ভেতরে ছিল সম্পূর্ণ নজরুলকে প্রকাশের প্রয়াস। গবেষক ও পাঠকদের অভিযোগ, নজরুল ইনস্টিটিউট এখন ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত হয়েছে।

নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮-এর কার্যাবলির শর্তে বলা হয়েছে, কবির সাহিত্য, সংগীতসহ সব সৃষ্টিকর্মের ওপর গবেষণা, প্রকাশনা, সংরক্ষণ এবং তা প্রচারের কাজ করবে এ প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৫ সালে ইনস্টিটিউট তৈরির সময়ও এটিই ছিল এর উদ্দেশ্য। এসব প্রসঙ্গে জানতে প্রথম আলো কথা বলেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ, ট্রাস্টি বোর্ড, সংগীতশিল্পী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ কেবল বারবার সামনে আনতে চায় শুদ্ধ স্বরলিপি আর নজরুল রচনাসমগ্র প্রকাশে তাদের সাফল্যের কথা।

‘প্রকাশনা খাতে বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকার মধ্যে গত অর্থবছরে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। প্রকাশনা ছাড়াও এ খাতে অন্তর্ভুক্ত আছে বিভিন্ন সম্মানীর অর্থ।’
মো. রবিউল ইসলাম, গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক

আদি রেকর্ড থেকে গানের স্বরলিপি

নজরুলের গানের স্বরলিপি তৈরি করা হয় আদি গ্রামোফোনের রেকর্ড শুনে শুনে। গ্রামোফোন কোম্পানিতে কবি যোগ দেওয়ার পর কমল দাশগুপ্ত, সুরেশ চক্রবর্তী, চিত্ত রায়সহ আরও কেউ কেউ সুর করেছেন নজরুলের গানের। কবিও স্বকণ্ঠে তুলেছেন কিছু কিছু গান। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত রেকর্ড হওয়া সেসব নজরুলসংগীত শুনে স্বরলিপি তৈরির সুযোগ থাকলেও ইনস্টিটিউট সাধারণত ১৯৪১ সাল পর্যন্ত রেকর্ড অনুসরণ করে। কারণ, ওই সময় থেকে কবির স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করেছিল। ১৯৪১ সালের পর রেকর্ড হওয়া গানের সুর নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকে গেছে।

কবি-গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দকে বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম বলেছিলেন, ‘কাজী সাহেবের গলা ছিল ফ্যাঁসফ্যাঁসে। কিন্তু এমন আবেগ দিয়ে গাইতেন যে মাত করে দিতেন।‌’ তেমন আবেগেরই নিদর্শন রেখে গেছেন সংগীতবিদ আবদুল আহাদ, বেদার উদ্দিন আহমদ, সোহরাব হোসেন, সুধীন দাশ, তালিম হোসেন, এস এম আহসান মোর্শেদ, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ বা রফিকুল ইসলামের মতো নজরুলের সৃষ্টিপ্রেমী অনেক গুণীজন।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রায় তিন হাজার গানের মধ্যে ইনস্টিটিউট স্বরলিপি তৈরি ও সত্যায়ন করেছে ১ হাজার ৩৭৫টির। সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে ৫৪টি খণ্ডে। এর মধ্যে ১৯টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রথম ১৫ বছরে।

নজরুলের আরও প্রায় ২০০ গানের স্বরলিপি তৈরির পর তার সত্যায়নের কাজ চলছে। প্রায় ১৫০ আদি গ্রামোফোন রেকর্ড এখন আছে নজরুল ইনস্টিটিউটের সংগ্রহে। ১৯৯৩ সালে সুধীন দাশের কাছ থেকে তিনটি গানের স্বরলিপি পেয়েছিলেন শিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন আর সালাউদ্দিন আহমেদ। এ ধরনের অভিজ্ঞতা সে সময়ের অনেক শিল্পীরই রয়েছে। স্বরলিপি তৈরি হতেই শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়ার সে আবেগ এখন আর নেই প্রতিষ্ঠানটির। এর পেছনে বরাদ্দের ঘাটতিকে কোনোভাবে দায়ী করা যায় না। সে প্রমাণ দেখা গেল গত অর্থবছরের হিসাবের খাতায় চোখ রেখে।

‘তালিকাভুক্ত প্রখ্যাত শিক্ষকেরাই প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণের মান নিয়ে কখনো অভিযোগ পাইনি।’
মোহাম্মদ জাকীর হোসেন, প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক

বরাদ্দের অর্ধেকই বেতনে

নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ হয়েছিল ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যয়ের প্রধান খাত বেতন, প্রকাশনা, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ‘প্রকাশনা খাতে বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকার মধ্যে গত অর্থবছরে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। প্রকাশনা ছাড়াও এ খাতে অন্তর্ভুক্ত আছে বিভিন্ন সম্মানীর অর্থ।’

সামান্য কিছু বাদে প্রশিক্ষণ বাবদ ৩০ লাখ আর অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রচার ও বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় আড়াই লাখ টাকা। নিজস্ব তেমন কোনো আয় নেই এ প্রতিষ্ঠানের। প্রতি অর্থবছর শেষে নজরুল ইনস্টিটিউটকে খরচের হিসাব দিতে হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে।

নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, ইনস্টিটিউটের মোট বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৫ লাখ ২৭ হাজার ৯১৪ টাকা। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের সবচেয়ে বড় কর্মকাণ্ড বলতে গেলে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। অন্য কাজের উৎসাহে যেন ভাটা পড়েছে।

প্রশিক্ষণের মান নিয়ে কথা

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত প্রখ্যাত শিক্ষকেরাই প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণের মান নিয়ে কখনো অভিযোগ পাইনি।’

তবে ভিন্ন সুরে কথা বললেন আরেকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর ১০টা সাধারণ গানের স্কুলের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। প্রশিক্ষকদের মধ্যে কোর্স শেষ করার মনোভাবই বেশি।’ তাঁর প্রশ্ন, গত এক দশকে ইনস্টিটিউট থেকে কজন শিল্পী উঠে এসেছেন?

আবৃত্তি, গান, নাচ—এই তিন বিভাগে ইনস্টিটিউটে মোট ১৪টি কোর্সে প্রশিক্ষণ হয়। ২১ জন স্বনামখ্যাত প্রশিক্ষক সপ্তাহের পাঁচ দিন সকালে তালিম দেন। এ বছরের জুলাই মাসের হিসাবে দেখা গেল, গত এক বছরে এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩২৪ শিক্ষার্থী। করোনা অতিমারির কারণে এ সংখ্যা কমেছে।

তিনটি বিভাগের মধ্যে সংগীতে আছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আর ডিপ্লোমা কোর্স। আবৃত্তি আর নৃত্যে ডিপ্লোমা নেই। তবে আগ্রহের ঘাটতিটা আরও স্পষ্ট হয় গবেষণা ও ব্যবস্থাপনার দিকে তাকালে।

গবেষণায় বৃত্তি নেই, গত শতকে প্রকাশিত বই আছে ছয়টি

গত ২৯ জুন বিকেলে শাখাওয়াত উল্লাহ নামের এক পাঠক গিয়েছিলেন ধানমন্ডির নতুন ১৫ নম্বর (পুরোনো ২৮ নম্বর) রোডের নজরুল ইনস্টিটিউটে। নজরুল ইসলামের কবিতায় উল্লেখ করা সব ধরনের গাছের নাম সংগ্রহ করতে চান তিনি। বিক্রয়কর্মীর ছিল বিরক্তিমাখা মুখ। প্রথম আলোকে শাখাওয়াত বলেন, ‘লেখকদের পছন্দের তালিকা নিয়ে কত বই হয়।

অথচ জাতীয় কবির রচনায় স্থান পাওয়া বৃক্ষ বা ফুলের নাম নিয়ে পৃথকভাবে কিছু পেলাম না।’ তবে গবেষণা নিয়ে আশ্বস্ত করতে চাইলেন সদ্য গঠিত নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি জানালেন, ‘গবেষণার প্রসঙ্গ নিয়ে নতুন করে ভাবছি আমরা। আপনারাও পরামর্শ দেবেন। কবিকে নিয়ে ভালো তথ্যচিত্রও হয়নি তহবিলের ঘাটতির কারণে।‌’

নজরুলের কাজের ওপর গবেষণা নিয়ে ইনস্টিটিউট প্রকাশ করেছে মোট ১৫৯টি বই। এর মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে ৫৩টি, যার ২০টি বইয়েরই প্রকাশকাল ২০১৯ সাল। গত শতকে প্রকাশিত মাত্র ৬টি গবেষণামূলক বই আছে বাজারে। গুরুত্বপূর্ণ বই পুনর্মুদ্রণ হয় না কেন—জানতে চাইলে বরাদ্দের কমতি, জনবলঘাটতির কথা জানিয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

গবেষণা ক্ষেত্রের সঙ্গে ঘাটতি আছে ব্যবস্থাপনায়ও। গবেষণার জন্য কোনো অনুদান বা ফেলোশিপ দিতে পারে না এই ইনস্টিটিউট। গবেষণাপত্র জমার পর অনুমোদিত হলে বই আকারে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গবেষণার বিষয় নির্ধারণের ব্যবস্থা নেই। নির্ভর করতে হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাজের ওপর। তাই নজরুলের সাম্যবাদ, সংগীতে রাগের ব্যবহার বা সুরের বৈচিত্র্য নিয়ে বই থাকলেও নজরুলের লেখার বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ খুব কম।

অথচ কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু কমরেড মুজফ্‌ফর আহমদ তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘নজরুল সাহিত্য পাঠই নজরুল অধ্যয়ন না।’ নতুন যুগের নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গবেষণাকর্মই যে নজরুলের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন, সে কাজটিতেই ইনস্টিটিউট পিছিয়ে পড়ছে। গবেষণার মতো মলিন অবস্থা পাঠাগারটিরও। সেখানে বই থাকলেও পাঠক নামমাত্র।

পাঠক গড়ে দিনে তিনজন

এ বছরের জুন মাসে বাংলা একাডেমির বিপণনকেন্দ্র থেকে ১৪৮টি বই ৬ কপি করে কিনেছে কর্তৃপক্ষ। পাঠাগারে এখন তালিকাভুক্ত বইয়ের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮০০। এত দিনেও আধুনিক পদ্ধতিতে বইগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। বই এখনো খুঁজে বের করতে হয় পুরোনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।

২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত পাঠাগার ব্যবহার করেছেন ৭২০ জন। পরবর্তী পাঁচ বছরেও সংখ্যা প্রায় একই। করোনায় কমেছে আরও। সর্বোচ্চ পাঠকসংখ্যা ধরলেও নজরুল ইনস্টিটিউটের এই পাঠাগার দিনে গড়ে তিনজনের বেশি পাঠক ব্যবহার করেন না। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিশেষ পাঠাগার বলে পাঠক এখানে কম।

অভিযোগ আছে, সেখানকার বিপণনব্যবস্থা নিয়েও। নজরুল জীবনী নিয়ে কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে জানালেন, ‘২০১৪ ও ২০২২ সালে দুটি বইয়ের জন্য বহুবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রীতিমতো হতাশ হয়েছি। নিজেদের তালিকা না দেখে অনলাইনে বই খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।’

হতাশার কথা জানিয়েছেন কবির আত্মীয়রাও। কবির নাতনি ও ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টের সদস্য খিলখিল কাজী প্রথম আলোকে বললেন, ‘বিদেশ থেকে যদি কেউ এসে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান, কতটুকু পাবেন এখানে?’ একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ নজরুল সম্মেলনও বন্ধ রয়েছে আড়াই বছর ধরে।

রুদ্ধ সম্মেলন, শিল্পীদের অভিমান

দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত নজরুল সম্মেলন ছিল রাজধানী থেকে যাওয়া দেশবরেণ্য শিল্পী আর স্থানীয় শিল্পীদের মিলনমেলা। সবশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০২০ সালের মার্চে। ইনস্টিটিউটের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মনির হোসেন প্রথম আলোকে জানালেন, ‘এটি প্রকল্পের আওতায় হতো। একই সঙ্গে প্রকল্প শেষ এবং করোনা শুরু হওয়ায় সম্মেলন বন্ধ রয়েছে।

তবে আমরা কবির জন্মবার্ষিকীসহ বিভিন্ন তিথি উপলক্ষে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠান করছি। প্রকল্পের বরাদ্দ পেলেই সম্মেলন হবে।’ কিন্তু দুই বছর আগে শেষ হওয়া প্রকল্পের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব তৈরি করা হয়নি।

ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে যেকোনো আয়োজনে সবাইকে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছায়ও আছে ঘাটতি। তাই অনেক শিল্পীই অভিমানাহত। দেশবরেণ্য শিল্পী ফেরদৌসী রহমান প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রতিষ্ঠার সময় থেকে নজরুল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ছিলাম।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, বেদার উদ্দিন আহমদ বা সোহরাব হোসেনদের মতো শ্রদ্ধেয়জনেরা সবকিছুতে ডেকে নিতেন আমাকে। স্বরলিপি সত্যায়নকারী কমিটিতেও ছিলাম দীর্ঘদিন। অথচ সেই প্রতিষ্ঠান থেকে শেষ কবে একটা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি, মনে করতে পারি না।’

নজরুল ইনস্টিটিউটের পাশেই তৈরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির নতুন বহুতল ভবন। বর্তমান ভবনে এখনো আছে বহু ব্যবহৃত সিঁড়ি, রং ঝলসানো পোস্টার। এসব যেন বলছে পুরোনো দিনের সেই আবহের স্মৃতি, যখন সুধীন দাশের মতো শিল্পীরা নজরুলকে ভালোবেসে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন গানের স্বরলিপি। পুরোনো এই ভবনটিতে নজরুলের নাম আছে। তবে অনেকটাই অনুপস্থিত কবির প্রতি ভালোবাসার সেই উচ্ছ্বাসটুকু।